গত ২২ নভেম্বর চ্যালেঞ্জ কাপ ২.০ দিয়ে বাংলাদেশের ২০২৪-২৫ ফুটবল মৌসুমের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব শেষ হয়ে দ্বিতীয় পর্বের এক রাউন্ড হয়েছে। ফেডারেশন কাপ টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্ব শেষে সেমিফাইনাল পর্যায়ে। চলতি মৌসুম অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গেলেও রেফারিজ কমিটি গঠন করতে পারেনি বাফুফে। ২০ মার্চ নির্বাহী কমিটির তৃতীয় সভায় ১০টি আলোচ্যসূচির মধ্যে অন্যতম রেফারিজ কমিটি গঠন।
২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচনের পর ৯ নভেম্বর প্রথম কার্যনিবাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় প্রায় ২০ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হলেও গুরুত্বপূর্ণ রেফারিজ কমিটি হয়নি। মাসখানেক পর ১১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় রেফারিদের সম্মানী বৃদ্ধির চিঠি
আলোচ্যসূচিতে থাকলেও ওই সময় রেফারিজ কমিটি গঠন করতে পারেনি ফেডারেশন। তৃতীয় সভায় এসে তারা রেফারিজ কমিটি গঠনের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রেফারিরা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পাঁচ রাউন্ডের সম্মানী পেয়েছেন। প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন প্রথম লেগের বাকি চার রাউন্ডে ঈদের আগে পাওয়ার। কাজী সালাউদ্দিন আমলে রেখে যাওয়া ফেডারেশনের কাছে দেনা এক কোটি টাকার ওপর।
১১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সভায় জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ ও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে চট্টগ্রাম এবং যশোরে দু’টি নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল দেশের বাইরে ব্যস্ত সময় পার করায় এই দু’টি সভা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০ মার্চ বাংলাদেশ ফুটবল দল শিলংয়ের উদ্দেশ্যে সকালে রওনা হবে। সেদিন দুপুরে বাফুফে ভবনে কর্তারা বসবেন সভায়। ১০টি আলোচ্যসূচির মধ্যে দু’টি আর্থিক সংক্রান্ত।
২০২৫ সালের বাজেট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সম্প্রতি ফিফা ফান্ড সীমিতছাড়করণ প্রত্যাহারের বিষয়টিও রয়েছে। বাফুফের টেকনিক্যাল ও প্রশাসনিক মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন স্টাফ। এত সংখ্যক লোকবল থাকলেও সুনির্দিষ্ট এইচআর পলিসি নেই। সেই পলিসি অনুমোদন আসন্ন সভার অন্যতম বিষয়।
এপ্রিলের মাঝামাঝি রাজধানী ঢাকার স্কুলগুলো নিয়ে স্কুল ফুটবল আয়োজন করতে চায় বাফুফে। নির্বাহী কমিটির সভায় এই টুর্নামেন্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। এর সঙ্গে চলমান অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ও তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলের উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা হবে। বার্ষিক সাধারণ সভায় সাধারণ সম্পাদক বাফুফের বাৎসরিক কর্মকান্ডের প্রতিবেদন পেশ করেন। নির্বাহী সভায় সাধারণত তাকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হয় না। তবে নতুন কমিটির তৃতীয় সভাতেই বিগত চার মাসে ফেডারেশনের সামগ্রিক কর্মকান্ড পেশ করতে হবে সাধারণ সম্পাদককে। সভাপতির নির্দেশক্রমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাহী সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করেন।
সভাপতির অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিক চিঠি আকারে কমিটির সকলকে অবহিত করেন সাধারণ সম্পাদক। সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নারী ফুটবলে সংকট। এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি নেই আগামী সভায়। ১৮ নারী ফুটবলার ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারকে বিদ্রোহ করেছিলেন। নারী ফুটবলে উদ্ভুত সংকটের জন্য বিশেষ কমিটিও করেছিলেন ফেডারেশন সভাপতি। সেই কমিটি খেলোয়াড়, কোচ, নারী উইং সকল পক্ষের নানা বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ করেছিল। বাফুফে সভাপতি সেই প্রতিবেদন পড়ে খেলোয়াড়-কোচ দুই পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন, কিন্তু প্রতিবেদনের সুপারিশ/পর্যবেক্ষণ আনুষ্ঠানিক কোনো বাস্তবায়ন হয়নি বলে ধারণা ফেডারেশনের অনেকের।
বিশেষ কমিটি এক সপ্তাহ প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সভা করেছিরেন। এত সময় ও গুরুত্ব দিয়ে কাজটি করলেও প্রতিবেদনের সুপারিশ/পর্যবেক্ষণ ফুটবলের ভবিষ্যৎ পথচলার স্বার্থে নির্বাহী কমিটির সভায় সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি হিসেবে থাকা উচিৎ ছিল মনে করেন ফেডারেশনের অনেক কর্মকর্তা। বিশেষ করে কোচ এখনও সাবিনাদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন, আবার ফুটবলাররাও কোচকে এড়িয়ে চলতে চান। এর সুষ্ঠু সমাধান এখনও হয়নি। নির্বাহী কমিটিতে এ বিষয়টি সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি থাকলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটা গ্রহণযোগ্য অবস্থায় উপনীত হওয়া সম্ভব ছিল।
নারী ফুটবলে উদ্ভুত ঘটনা, বাটলার ও হ্যাভিয়েরের নিয়োগ, ফেডারেশনে মাথাভারী প্রশাসন নিয়ে নির্বাহী কমিটির অনেক সদস্যের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ নিয়ে নির্বাহী সভায় অনেকে মতামত রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংক্রান্ত কোনো আলোচ্যসূচি না থাকায় বিবিধই এখন তাদের ভরসা।
আরএ/এসএন