বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদ্বেগের একটা বড় জায়গাজুড়ে’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড।
সোমবার (১৭ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিনের দুভার্গ্যজনক নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনা মার্কিন সরকার এবং ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের একটা বড় উদ্বেগের জায়গা।”
সাক্ষাৎকারে গ্যাবার্ডের কাছে ‘বাংলাদেশের চরম ইসলামপন্থা’ ও সন্ত্রাস নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়।
উত্তরে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা কেবল শুরু হয়েছে। কিন্তু এটি এখনও উদ্বেগের মূল একটা জায়গা হিসেবে রয়ে গেছে।”
তিন দিনের সফরে ভারতে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। নিরাপত্তা বিষয়ক একটি বৈঠকে যোগ দেন তিনি। এ বৈঠকে যোগ দিতে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ডের গোয়েন্দা প্রধানরাও ভারতে এসেছেন। তিনি মঙ্গলবার ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি নিয়ে ভারতের নিয়মিত বহুদেশীয় সম্মেলন ‘রাইসিনা ডায়লগে’ বক্তব্য দেবেন।
সফরকালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাতীয় নিরাপত্তা পরামশর্ক অজিত দোভালসহ শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকদের সঙ্গেও তার বৈঠক করার কথা রয়েছে বলে খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
ইন্দো-প্যাসিফিক সফরের অংশ হিসেবে গ্যাবার্ড এরপর জাপান ও থাইল্যান্ডেও যাবেন।
এনডিটিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথোপকথনের সময় ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রসঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, “চরম ইসলামপন্থিদের হুমকি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক যে প্রচেষ্টা, তাদের সবার শিকড় একই আদর্শ ও উদ্দেশ্যে মিশেছে। তাদের সে উদ্দেশ্য হল ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা।“
“এটা স্পষ্ট, তাদের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য ধর্ম’ ছাড়া অবধারিতভাবে বাকি সব ধর্মের অনুসারীদের তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। আর খেলাফতের মত মতবাদ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে।”
গ্যাবার্ড বলেন, “ইসলামি সন্ত্রাসবাদের যেকোনো মতাদর্শ শনাক্ত করতে এবং তা পরাজিত করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গত নভেম্বরে গ্যাবার্ডকে জাতীয় গোয়েন্দা প্রধানের মনোনয়ন দেন ট্রাম্প।
তুলসীর অধীনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ), কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই), প্রতিরক্ষা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগসহ ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে।
ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেডিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম বিদেশি সরকারপ্রধান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান মোদী। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে তাদের বৈঠকেও উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
ওয়াশিংটনে দুই বিশ্ব নেতার বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগের কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে তুলে ধরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?
তুলসী নাম এবং হিন্দু হওয়ার কারণে অনেকেই তাকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে ধারণা করেন।
তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভুত নন। তার জন্ম ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায়। বয়স ৪৩ বছর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হিন্দু কংগ্রেস সদস্য।
১৯৮৩ সালে তুলসী গ্যাবার্ডের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করে। তার মা হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। তার বাবা রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছিলেন। হিন্দু ধর্মে অনুরাগের কারণে গ্যাবার্ডের মা সন্তানের হিন্দু নাম রাখেন। তুলসী গ্যাবার্ড হাওয়াই থেকে ২০১৩ সালে প্রথমবার এমপি হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। রাজনীতি ছাড়াও দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তুলসী। ইরাক ও কুয়েতের মতো দেশেও ওই সময় মোতায়েন ছিলেন তিনি।
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছেড়েছিলেন তুলসী। তার আগে ২০২০ সালে বাইডেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়েও তিনি শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছিলেন তুলসী।
প্রথমে তিনি স্বতন্ত্র হিসাবে নাম নিবন্ধন করেছিলেন। পরে ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন তুলসী । চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে সাহায্য করেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেইনকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরোধিতা করেছিলেন তুলসী। সেই জায়গা থেকে তার নতুন দায়িত্ব তাকে কোন পথে নিয়ে যায় সবার নজর সেদিকে। তুলসীর বাবা মাইক গ্যাবার্ডও ছিলেন রাজনীতিবিদ। তিনি রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটদের দিকে চলে গিয়েছিলেন। ছিলেন সেনেটারও।
আরএইচ