“মেট্রোরেলের জন্য ‘ঢাকা গেট’ ভাঙা হবে অন্যায়”

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা। এসব স্থাপনার মধ্যে ঐতিহাসিক ঢাকা গেট অন্যতম।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের প্রাচীন এই গেট। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলা আর সংস্কার না করার ফলে কালের সাক্ষী এই গেটটি আজ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এরমধ্যে ঢাকা মেট্রোরেলের কাজ হওয়ায় এর মাঝখানের অংশটি ভেঙে ফেলার উপক্রম হয়েছে।

সাড়ে তিনশ বছর আগের এই ঢাকা গেটটি ‘মীর জুমলার গেট’, ‘ময়মনসিংহ গেট’এবং ‘রমনা গেট’ নামেও পরিচিত।

লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ সম্প্রতি একটি পত্রিকায় ঢাকা গেটের মাঝখানের একটি অংশ যাতে ভাঙা না হয়, তা নিয়ে লিখেছেন।

তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘যখন ঢাকা মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়, তখন আমি ঢাকা গেট যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করি। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ঢাকা গেটের কোনো ক্ষতি হবে না।’

‘কিন্তু খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মধ্যের স্তম্ভটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, স্তম্ভটির ওপর দিয়ে মেট্রোরেল গেলে ক্ষতি নাও হতে পারে। সেখানে কর্মরত নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদেরও আমি আমার উদ্বেগ জানিয়েছি। যদিও জাতির পুরাকীর্তি রক্ষার দায়িত্ব তাদের নয়। ক্ষতি হলে তাদের কিছু যায় আসে না।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা গেটের তিনটি অংশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে। এই দিকে অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকা গেটের এই অংশটি যেন বিদায়ের প্রহর গুনছে। দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের সংস্কার ছাড়াই অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যত্নের অভাবে খসে পড়েছে এর দেয়ালের ইট-চুন-সুড়কি।

তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিন নেতার মাজারের পাশের অংশটি খুবই চমৎকার ভাবে রং করা হয়েছে। আর মাঝখানের অংশ পড়েছে সড়ক বিভাজকের দিকে। তা ভেঙে ফেলে হবে বলে জানান ঢাকা মেট্রোরেলের ফ্ল্যাগ ম্যান।

ইতিহাসবিদরা জানান, বর্তমান চেহারায় গেটটিকে যতটা ছোট দেখা যায়, আগে তা এতো ছোট ছিল না। অযত্ন আর অবহেলায় এবং চারদিকে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠায় গেটটির আকার ছোট হয়ে গেছে।

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা গেট সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত। তবে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের। আমরা বড় জোর গেটের বতর্মান অবস্থা সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে পারি।

এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন স্থাপনার মধ্যে ঐতিহাসিক ঢাকা গেট অন্যতম। ঢাকা গেট হচ্ছে প্রাচীন আমলের তৈরি করা। এই গেটটি এখন ধ্বংসের মুখে পড়েছে। কেউ দেখভাল করে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, আমাদের ঢাকার যে কটি নিদর্শন ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস তারমধ্যে মোঘল আমলের ঢাকা গেট অন্যতম। এর সঙ্গে ঢাকার অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ অনেক ইতিহাস জড়িত। এটি নষ্ট হলে আমাদের স্মৃতিহীন হয়ে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক  অধ্যক্ষ শরীফুদ্দিন আহম্মেদ বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ঢাকা গেট বা মীরজুমলা গেটটি হচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি গেট। যা মোঘল আমলে তৈরী করা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাংলার সুবেদার মীর জুমলা রমনা অঞ্চলে গেটটি নির্মাণ করেছিলেন।

তিনি বলেন, ঢাকা নগরীকে উত্তর দিক থেকে মগদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এই প্রবেশদ্বারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের প্রবেশপথ মীর জুমলার গেটে একদল হাতি যা ১৮৭৫ ছবি দেখছেন সেই গেটটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল আনুমানিক ১৮২৯ সালের দিকে।

তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের কাছে লজ্জার ব্যাপার। আমাদের এই প্রাচীন গেটটির মাঝখানের অংশটিকে আমরা শুধুমাত্র মেট্রোরেলের জন্য ভাঙতে পারি না। এটি অন্যায় হবে।

এ বিষয়ে আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরে অথবা আগে এই ঢাকা গেটকে পুনর্নির্মাণ করা হয়। তবুও আপনি এই বিষয়ে ইতিহাস বিদদের সাথে কথা বলেন।

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on: