'যুক্তরাষ্ট্র জাপানে বোমা ফেলেছিল, পরে তারাই মিত্রে পরিণত হয়'

বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। অন্তর্বর্তী সরকার প্রো-বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে দাবি করে একথা বলেন তিনি।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওঠা প্রশ্নের ব্যাখ্যায় শুক্রবার আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন।

বিশ্বে পূর্ব শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড শতাব্দী ধরে অসংখ্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাত মিলিয়েছে। একই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জাপানে বোমাবর্ষণ করেছিল, কিন্তু পরে তারা মিত্রে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কী পাকিস্তানপন্থি হয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এ ধরনের প্রশ্ন আমাদের মোটেও অবাক করেনি। এমন কিছু মানুষ সবসময়ই থাকবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়ে খুব কমই বিশ্বাস করবে।

উপ-প্রেস সচিব বলেন, আমাদের জবাব স্পষ্ট ছিল। অতীতে দেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন, এখন থেকে এটি বাংলাদেশপন্থি নীতি হবে, যা আমাদের নিজস্ব স্বার্থে পরিচালিত হবে।
এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে অন্য প্রতিবেশী থেকে দূরে সরে যাওয়া একটি স্বাধীন জাতির পররাষ্ট্র নীতি হতে পারে না বলে মনে করেন আজাদ মজুমদার।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সফররত পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচকে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তার কথাগুলো বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় লেগেছে। এ সময় তিনি (বালুচ) পারস্পরিক স্বার্থের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

আজাদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী একটি আবেগঘন বিষয় হলো, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার জন্য দেশটির পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি। এমনকি পাকিস্তানের সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, ক্ষমা চাওয়া-সদিচ্ছা ও উদারতার একটি কাজ হবে। কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর ও সামরিক আমলাতন্ত্র সর্বদা এই ধরনের কথার বিরোধিতা করেছে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো ক্ষমা চাওয়া হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ সম্পদের বিভাজনের বিষয়টির ওপরও জোর দিয়েছে, যা অতীতের শাসকদের কাছে ভুলে যাওয়া একটি বিষয় ছিল। অতীতে শাসকরা এটি আলোচনর চেয়ে বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করতেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের একটি অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অভ্যন্তরীণ মূলধন সৃষ্টি, বৈদেশিক ঋণ নিষ্পত্তি এবং বৈদেশিক আর্থিক সম্পদ ধরে রাখার অনুমিত হিসাবের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়।

আজাদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের আরো প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেছে, যা ১৯৭০ সালের নভেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ/সংস্থাগুলো অনুদান দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের লাহোর শাখায় স্থানান্তরিত হওয়ার আগে এই অর্থ ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের অফিসে পড়ে ছিল।

আজাদ মজুমদার তার পোস্টে আরো উল্লেখ করেন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন আরেকটি বিষয় ছিল, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করেছিল। অতীতে পাকিস্তান তাদের লোকদের মাত্র এক লাখ ২৫ হাজার জন ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ৭৯টি শিবিরে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার জন ছিল।

তিনি বলেন, এই বিষয়গুলোই দুই দেশের মধ্যে একটি সুস্থ ও ভবিষ্যৎমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম বিকল্প হলো আলোচনা এবং অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক এটাই করার চেষ্টা করছে। অনেক বছর পর বাংলাদেশ পাকিস্তানকে আলোচনায় এনেছে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার পাশাপাশি যথাযথভাবে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছে।

উপ-প্রেস সচিব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ডিসেম্বরে মিশরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে এক বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বালুচের সঙ্গে বৈঠক করার সময় তিনি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতের সুবিধার্থে অতীতের ইস্যুগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এখন একসঙ্গে কাজ করা ও এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবত সময় এসেছে।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঈদগাহ মাঠের ঘটনার মূল আসামি জরেজুল ইসলাম গ্রেপ্তার Nov 14, 2025
img
১০ লাখ টাকা পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশের পদকজয়ী আর্চাররা Nov 14, 2025
img

ডয়চে ভেলে

বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত কেন শক্তি বৃদ্ধি করছে? Nov 14, 2025
img
সংবিধান অনুযায়ী এখন নির্বাচনের কোনো ভিত্তি নেই : গোলাম পরওয়ার Nov 14, 2025
img
মনোনয়ন ইস্যুতে এবার ধানক্ষেতে নবদম্পতির রিভিউ আবেদন Nov 14, 2025
img
এনসিপির আখতারের কী ফাঁস করার হুমকি দিচ্ছেন মাহমুদ? Nov 14, 2025
img
মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ মাদরাসা ছাত্রের Nov 14, 2025
img
চোট নিয়ে জাতীয় দল থেকে ছিটকে গেছেন এমবাপে Nov 14, 2025
img
শাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৭ ডিসেম্বর Nov 14, 2025
img
সৈন্যসংখ্যা বাড়াতে নতুন সামরিক নীতি জার্মান সরকারের Nov 14, 2025
img
১০১১টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে এনসিপি Nov 14, 2025
img
প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কুষ্টিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিল Nov 14, 2025
img
একটি দল সংস্কার চায় না, তারা পুরোনো কায়দায় দেশ চালাতে চায় : ডা. তাহের Nov 14, 2025
img
পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর, বহিষ্কার ছাত্রদল নেতা Nov 14, 2025
img
ভোলায় প্রচুর গ্যাস রয়েছে, যা কৃষিখাতে কাজে লাগাতে চাই : শিল্প উপদেষ্টা Nov 14, 2025
img

কাদের সিদ্দিকী

যৌবনে প্রেম করিনি, মিছিল করতে করতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে Nov 14, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসা বাতিলের বিল পার্লামেন্টে Nov 14, 2025
img
নির্বাচনের পথরেখা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সফল করতে হবে : জোনায়েদ সাকি Nov 14, 2025
img
দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভারতের হয়ে ইতিহাস গড়লেন সূর্যবংশী Nov 14, 2025
img
রামপুরায় অবৈধ পোস্টার,ব্যানার,ফেস্টুন অপসারণ করল ডিএনসিসি Nov 14, 2025