স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও। তারা বিগত সরকারের আমলের চিকিৎসক-প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসনে সহায়তা করেছেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, পানিসম্পদ, গণপূর্ত, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ঘুরে ঘুরে তদবির করতেন বলে নাম গোপন রাখার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এ ধরনের অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন ও তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দিয়ে সরকারি আদেশ জারি হয়। ডা. মাহমুদুল হাসান রোগীর সঙ্গে বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। তিনি ফিরবেন কি না তা নিয়ে অনেক কর্মকর্তা সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাদের বিষয়ে এক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের তদবিরের বিষয়ে অনেক কর্মকর্তাই জানেন। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য এবং প্রকৌশলীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন।
মোয়াজ্জেম (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে উপজেলা প্রকৌশলী পর্যন্ত প্রায় সব গ্রেডের কর্মকর্তার বদলি-পদায়নে তদবির বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঘুরে ঘুরে তদবির করতেন। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, পানিসম্পদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার তদবিরে নামেন।
প্রায় একই অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (ছাত্র প্রতিনিধি) তুহিন ফারাবি ও মো. মাহমুদের বিরুদ্ধে। তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ লাভের পর থেকে চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, পরিচালক, উপপরিচালক, সিভিল সার্জন নিয়োগ-বদলির মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তারা সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, প্যাথলজি টেকনিশিয়ান, হজ টিমে নার্স ও ডাক্তারদের নাম ঢুকানোর তদবির করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধ স্বাস্থ্য সেক্টরের ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ফারাবী ও মাহমুদ দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) অভিযোগের বিষয়ে মো. মোয়াজ্জেম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাকে অপসারণ করা হয়নি। আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। আগামী মাসে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) আমার মৌখিক পরীক্ষা আছে। এছাড়া আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরীক্ষায় ভাইভা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এসব কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। তিনি আরও বলেন, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রাজনীতি করবেন, তার ক্যারিয়ার আর আমার ক্যারিয়ার এক হবে না। আমি সরকারি চাকরি করব।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে ৪শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি এক টাকার দুর্নীতি করেছি কেউ তা প্রমাণ করতে পারবেন না। এসব ভিপি নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছে। আমি এক সময় গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। তাদের থেকে আলাদা হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠন করায় তাদের সঙ্গে আমার বিরোধ হয়। সে কারণে তারা গুজব ছড়াচ্ছে। এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আবার অপসারণও করেছে সরকার। গণঅধিকার পরিষদ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। সুতরাং সে গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছে তা অসত্য এবং অপ্রাসঙ্গিক। সে দায় এড়ানোর জন্য আবোলতাবোল বকছে। সরকার তার বিরুদ্ধে কিছুই না পেলে তাকে দায়িত্ব থেকে কেন সরিয়ে দেবে।
রাশেদ খান আরও বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন, ফারাবী ও মাহমুদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দুদক তদন্ত করতে পারে। এছাড়া সরকারের দায়িত্ব এজেন্সির মাধ্যমে সত্যতা অনুসন্ধান করা। এছাড়া ওই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব, সচিবের একান্ত সচিবের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া সময়ের দাবি। কারণ এপিএস এককভাবে দুর্নীতি করতে পারে না।
সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। সরকার নিজ দায়িত্বে বিভিন্ন এজেন্সির সহায়তায় তাদের সম্পদ অনুসন্ধান করতে পারে। এত মানুষ তাদের বিষয়ে মিথ্যা বলবে কেন? তারা ছাত্র, তাদের তো শত্রু থাকার কথা নয়।
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগ উঠতেই পারে। তদন্ত করে সত্যতা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার জনস্বার্থে বিষয়গুলো তদন্ত করে ধোঁয়াশা পরিষ্কার করবে বলে গণমানুষের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান মঞ্জু গণমাধ্যমকে বলেন, এ অভিযোগ আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক সময় অনেক অভিযোগ ওঠে। তবে তা তদন্ত হলে পরিষ্কার হয়। আশা করছি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বক্তব্য দেবে এবং বিষয়টি পরিষ্কার করবে। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে তা দুঃখজনক। সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এসএম/টিএ