কোরবানির দিন করণীয়-বর্জনীয়

কোরবানি মানে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আল্লাহর কাছে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ। কোরবানি মানেই মহান রবের কাছে নিজিকে বিলিয়ে দেওয়ার অনন্য আয়োজন। জীবনকে উত্সর্গ করার সেরা উপলক্ষ। ঈদুল আজহার দিন ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে দ্বাদশতম দিন পর্যন্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

কোরবানির দিন মুসলমানদের প্রথম ও প্রধান আমল্তঈদের নামাজ আদায় করা। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো কোরবানি করা। নবীজি (সা.) বলেছেন, 'আজকের দিনে আমরা সর্বপ্রথম ঈদের নামাজ আদায় করব। এরপর ফিরে এসে কোরবানি করব।' (বুখারি, হাদিস : ৯৬৮)

ঈদুল আজহায় করণীয় : ঈদের সালাতের আগে গোসল করা সুন্নত। উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নত। আর ঈদের দিনে রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।

রাসুল (সা.)-এর তিনটি পছন্দনীয় জিনিসের মধ্যে একটি হলো সুগন্ধি। তাই ঈদের দিনের পোশাক পরিধানের পর সুগন্ধি ব্যবহার করা চাই। কোরবানির দিনে ঈদের নামাজের আগে কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব। নবী করিম (সা.) ঈদুল আজহার দিন কিছুই খেতেন না, যে পর্যন্ত ঈদের নামাজ আদায় করতেন।

ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া ও অন্যপথ দিয়ে ফেরা সুন্নত। (বুখারি, হাদিস : ৯৮৬)

সম্ভব হলে ঈদগাহে হেঁটে যাওয়াও সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৭১)

ঈদের দিন তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নত। পুরুষেরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, নারীরা নীরবে পাঠ করবে। এ তাকবির জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করবে। (ফাতহুল বারি : ২/৫৮৯)

ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। ঈদের নামাজ সব নফল নামাজের মধ্যে ফজিলতপূর্ণ। ঈদের নামাজের আগে ও ফজরের নামাজের পরে কোনো নামাজ নেই। ঈদের নামাজের কোনো আজান ও ইকামত নেই। ঈদের দিনে ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। ঈদের দিনে সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ছিল, 'তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা।'

ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া তোহফা দেবে ও গরিব মিসকিনকে দান করবে।

ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড় থেকে যেন পরিবেশ দূষিত না হয় সেদিকে প্রত্যেক মুসলমানের সতর্ক হওয়া উচিত। কোরবানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত, আবর্জনা ও হাড় নিরাপদ দূরত্বে নির্দষ্টি জায়গায় ফেলে দেওয়া উচিত।

ঈদগাহে যাওয়ার পথে উচ্চ স্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া। ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা। কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা। আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৬-৫৮)

কোরবানি কখন ও কিভাবে করব : মোট তিন দিন কোরবানি করা যায়। ১০ জিলহজ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ১০ জিলহজ কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২৯৫)

১০ ও ১১ জিলহজ দিবাগত রাতেও কোরবানি করা জায়েজ। তবে দিনে কোরবানি করাই ভালো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৯২৭)

ঈদুল আজহায় বর্জনীয়
ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের বিশেষ দিন মনে করে জিয়ারত করা বিদআত। তবে পূর্বনির্ধারিত রুটিন ছাড়া হঠাত্ সুযোগ হয়ে গেলে একাকী কেউ জিয়ারত করলে দূষণীয় নয়।

পশুর বর্জ্য ইত্যাদি দ্বারা রাস্তা-ঘাট অপরিচ্ছন্ন করে রাখা উচিত নয়। এতে মানুষের কষ্ট হয়, যা বড় গুনাহ। তাই পশু জবাই করার পর রক্ত ও বর্জ্য ইত্যাদি নিজ উদ্যোগে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তোমরা দুটি অভিশপ্ত কাজ থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, অভিশপ্ত কাজ দুটি কী হে আল্লাহর রাসুল? জবাবে তিনি বলেন, মানুষের যাতায়াতের পথে অথবা (বিশ্রাম নেওয়ার) ছায়া বিশষ্টি জায়গায় পেশাব পায়খানা করা।' (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫)

অনেকে ঈদের আনন্দে মশগুল হয়ে নতুন জামাকাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যায়। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত ও কোরবানি করাই হচ্ছে মুসলমানদের মূল কাজ। ঈদগাহে বা ঈদের দিন সাক্ষাত্ হলে মুসাফাহা ও মুআনাকা করতেই হবে এমন বিশ্বাস ও আমল করা বিদআত। তবে এমন বিশ্বাস না করে সালাম ও মুসাফাহার পর মুআনাকা (গলায় গলা মেলানো) করায় কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মুসাফাহা ও মুআনাকা করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়।

কোরবানির গোশত, চামড়া ও এর কোনো অংশ বিক্রি করা যাবে না। অর্থাত্ বিক্রি করে নিজে উপকৃত হওয়া যাবে না। এমনকি কসাইকে পারিশ্রমিকস্বরূপ গোশত দেওয়া নিষদ্ধি (বুখারি, হাদিস : ১৭১৭)

তবে সাধারণভাবে তাকে খেতে দেওয়া বা হাদিয়া দেওয়ায় অসুবিধা নেই। ঈদের দিন উপলক্ষে যেখানে গান-বাজনা, অবাধে নারী-পুরুষ বিচরণ ইত্যাদির আয়োজন থাকে এমন মেলা আয়োজন করা, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম।মহান আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করুন।

এমআর


Share this news on:

সর্বশেষ

img
খারাপ সময়ে কার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন শাহরুখ? Nov 02, 2025
img
এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন মাহিম Nov 02, 2025
img
২১তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচিতে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা Nov 02, 2025
দাম্পত্য জীবন সুখী করার উপায় Nov 02, 2025
নতুন করে যে বার্তা দিলেন অরুণা বিশ্বাস Nov 02, 2025
টেস্ট অধিনায়কত্বে ফিরলেন শান্ত, ধারাবাহিকতা নিশ্চিত Nov 02, 2025
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে হিরো আলমের সাথে তুলনা করলেন ছাত্রদল নেতা Nov 02, 2025
ক্যাব সভাপতির প্রশ্নে যে অঙ্গীকার করলেন রুহুল কবির রিজভী Nov 02, 2025
img
চীনের সহায়তায় ড্রোন কারখানা স্থাপন করছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী Nov 02, 2025
img
সিলেটে বনবিভাগের বালু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার ১ Nov 02, 2025
img
ভারতীয় দলের ১২তম সদস্য হিসেবে যোগ দিল একটি কুকুর! Nov 02, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায় দিয়েই দেশে রাজনৈতিক সংকটের শুরু: আপিল বিভাগকে বিএনপি Nov 02, 2025
img
চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ৩ Nov 02, 2025
img
আপিল বিভাগে বিচারকাজ প্রত্যক্ষ করবেন নেপালের প্রধান বিচারপতি Nov 02, 2025
img
অপুর সঙ্গে কাজ বন্ধের কারণ জানাতে নারাজ গৌতম সাহা! Nov 02, 2025
img
ক্যারিবিয়ান সাগরে আরেক নৌকায় মার্কিন বাহিনীর হামলা, নিহত ৩ Nov 02, 2025
img
১৫ বছরের চেষ্টায় নিজস্ব প্রযুক্তির কার্গো বিমান তৈরি করে ইরান Nov 02, 2025
img
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মহিলাদেরকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলবে: নিতাই রায় চৌধুরী Nov 02, 2025
img
শেখ হাসিনার প্লট জালিয়াতি মামলার সপ্তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Nov 02, 2025
img
সালাহর রেকর্ড ছোঁয়া পারফরম্যান্সে লিভারপুলের স্বস্তির জয় Nov 02, 2025