গাজা উপত্যকায় ২ মার্চের পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। সংস্থাটি বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। তবে তাদের মতে, ৯টি ট্রাকের এ সহায়তা ‘সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো’।
ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস এক্সে জানান, বুধবার পাঠানো এই সরঞ্জাম, প্লাজমা ও রক্ত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির হাসপাতালগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হবে।
ইসরায়েল ২ মার্চ গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। তার দুই মাসেরও বেশি সময় পর কিছু খাদ্যসামগ্রী ঢুকতে দেওয়া শুরু হলেও এ পর্যন্ত অন্য কোনো ধরনের সহায়তা ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
গেব্রিয়েসাস জানান, ৯টি ট্রাকে করে জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী, দুই হাজার ইউনিট রক্ত ও দেড় হাজার ইউনিট প্লাজমা কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ইসরায়েলের মাধ্যমে গাজায় পাঠানো হয়েছে, ‘যদিও রুটটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু কোনো লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি’।
তিনি আরো বলেন, ‘এই সামগ্রীগুলো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হাসপাতালগুলোতে বিতরণ করা হবে।’
রক্ত ও প্লাজমা নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের কোল্ড স্টোরেজে সরবরাহ করা হয়েছে, যেখান থেকে তা মারাত্মক ঘাটতির মুখে থাকা অন্য হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হবে। এই ঘাটতির বড় অংশই তৈরি হয়েছে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে হামলার সময় আহতদের চাপের কারণে। গত সপ্তাহে ডব্লিউএইচও জানিয়েছিল, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৭টি আংশিক বা সীমিত পরিসরে কার্যকর আছে, বাকি হাসপাতালগুলো একেবারেই কাজ করছে না।
টেড্রোস জানান, ডব্লিউএইচওর আরো চারটি ট্রাক এখনো কেরেম শালোমে রয়েছে এবং আরো ট্রাক গাজার পথে রওনা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তবে এই চিকিৎসা সরঞ্জাম আসলে সমুদ্রে ফোঁটার মতো মাত্র। প্রাণ বাঁচাতে ব্যাপক সহায়তা প্রয়োজন। ডব্লিউএইচও অবিলম্বে, বাধাহীন ও ধারাবাহিকভাবে সব সম্ভাব্য রুট দিয়ে চিকিৎসা সহায়তা গাজায় প্রবেশের আহ্বান জানাচ্ছে।’
ইসরায়েল মে মাসের শেষ দিকে গাজায় সরবরাহ সামগ্রী ঢুকতে দেওয়া শুরু করে, প্রায় দুই মাসের সম্পূর্ণ অবরোধের পর। কিন্তু এর পরও বিতরণব্যবস্থা বিশৃঙ্খল রূপ নেয় এবং খাদ্য সংগ্রহ করতে আসা মানুষের ওপর প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি চালানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
২৬ মে গাজায় খাবার বিতরণ শুরু করে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ), যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত একটি নতুন বিতরণব্যবস্থা। তবে জাতিসংঘ ও বড় মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, এটি একটি বেসরকারি উদ্যোগ হলেও এর অর্থায়ন স্বচ্ছ নয় এবং এটি মূলত ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্য পূরণে তৈরি করা হয়েছে।
ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে অঞ্চলটিতে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। তারা বলছে, এই অভিযান হামাসকে পরাজিত করতে চালানো হচ্ছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যাদের নজিরবিহীন হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
এসএম/টিকে