পাকিস্তানের কাশ্মীর ও চীনের আকসাই অঞ্চলও ভারতের: অমিত শাহ

পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন আজাদ কাশ্মীরকেও নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করেছে ভারত। মঙ্গলবার লোকসভায় এক ভাষণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের একটি অখণ্ড অংশ। এর মধ্যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরও রয়েছে।

সোমবার জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্যসভায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লোকসভায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ ও জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পেশ হতেই উত্তপ্ত হয় অধিবেশন। লোকসভায় এই বিল পেশ হতেই তীব্র বিরোধিতা শুরু করে কংগ্রেস, ডিএমকে, তৃণমূলসহ বিভিন্ন বিরোধী দল।

শুরুতেই কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে তুমুল বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। পরে আরেক কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির সঙ্গেও অমিত শাহ বিতর্কে জড়ান।

বিজেপির সাবেক সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, আমরা সব সময়ই বলে থাকি জম্মু এবং কাশ্মীর; যেখানে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরও রয়েছে। একই সঙ্গে ভারত চীন সীমান্তের আকসাই চীনও ভারতের অন্তর্ভুক্ত। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। পুরো জম্মু ও কাশ্মীরই ভারতের অখণ্ড অংশ।’

এরপর অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘নিয়ম ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর ভাগ করা হচ্ছে। সিমলা চুক্তি ও লাহোর চুক্তি সত্ত্বেও কীভাবে এটা অভ্যন্তরীণ বিষয় হলো? ওই দুই চুক্তিই দ্বিপাক্ষিক ছিল। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে এত বড় একটা পদক্ষেপের পিছনে কী প্রক্রিয়া ও কী নিয়ম মানা হয়েছে তা গোটা কংগ্রেস দল জানতে চায়। গোটা কাশ্মীর উপত্যকাকে কেন আপনারা কয়েদখানা বানিয়েছেন?’

অধীর চৌধুরীর মন্তব্যের পাল্টা জবাবে অমিত শাহ বলেন, ‘এমন পদক্ষেপের পিছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। গোটা দেশে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের রয়েছে। দেশের সংবিধান ও জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধানেও সেই কথার উল্লেখ রয়েছে।’

অমিতের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘এই প্রথম দেখছি একটি রাজ্য ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, কোনো রাজ্যকে ভাঙতে গেলে বা তার সীমানা বিন্যাস করতে গেলে সেখানকার বিধানসভায় আলোচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মানুষের রায়ও নিতে হবে। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা এখন নেই। সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। অথচ এখন সংসদকে জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ স্থির করতে বলা হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তেলেঙ্গানা তৈরির আগে অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ইউপিএ সরকার কোনো অসাংবিধানিক কাজ করেনি।’

ইতিহাস টেনে এনে মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘১৯৫২ সাল থেকে যত বার নতুন রাজ্য হয়েছে বা রাজ্যের সীমানা নতুন করে বিন্যাস হয়েছে তত বার তা নিয়ে সেখানকার বিধানসভায় আলোচনা হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে করা হয়নি। বিধানসভার অনুমতি ছাড়া ধারা ৩৭০ প্রত্যাহার করা যায় না। এতে সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।’

বিশেষ অধিকার রয়েছে এমন অন্যান্য রাজ্যের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, সংবিধানের আরও নানা অনুচ্ছেদে নাগাল্যান্ড, আসাম, মণিপুর, সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশকেও বিশেষ অধিকার দেয়া হয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে কি সে রাজ্যগুলোকেও বার্তা দেয়া হচ্ছে?

মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘কংগ্রেস স্পষ্ট করুক তারা ৩৭০ অনুচ্ছেদ বহাল থাকার পক্ষে না বিপক্ষে?’

উত্তরে মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভায় আলোচনা ছাড়া এই অনুচ্ছেদ এ ভাবে প্রত্যাহার করা যায় না।’

তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে দেশ উদ্বিগ্ন।’ জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে? কেনই বা জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমা দেয়া হচ্ছে, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। এরপরই ওয়াকআউট করেন তৃণমূল সাংসদরা।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: