কোরবানির গোশত সংরক্ষণের সঠিক উপায়

সোমবারই সারা দেশে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল আজহা। এই ঈদে পশু কোরবানি করা নিয়ম। পশু জবাইয়ের পর গোশত কাটা, প্যাকেট করা, গরিব-দুস্থ আর স্বজনদের মাঝে গোশত বিলি করা এবং বেঁচে যাওয়া গোশত সংরক্ষণ করা হয়।

গোশতে প্রায়ই টিনিয়া সোলিয়াম নামে এক ধরনের পরজীবীর সংক্রমণ হয়। তাই গোশত সংরক্ষণে নানা ভুল ধারণার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। তাই গোশত কাটা, প্যাকেট করা ও ঠাণ্ডা করায় সতর্কতা প্রয়োজন।

সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে যেমন গোশতের পুষ্টিগুণ অটুট থাকে, তেমনি পরে ঝামেলাও কম হয়। অন্যথায় গোশতের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সে জন্য গোশত সংরক্ষণের আগে-পরে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়।

পূর্বের প্রস্তুতি:

গোশত কাটার উপকরণ, যেমন- দা, বঁটি, চাপাতি, ছুরি প্রভৃতি আগে থেকেই পরিষ্কার করে স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে রাখুন। নইলে এসবের মাধ্যমে গোশতে জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে এবং গোশত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

যেখানে জায়গায় গোশত কাটাকাটির কাজ করা হবে, আগে থেকেই সাবান অথবা স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে রাখুন। এসব জায়গাও জীবাণুর উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে।

যেখানে গোশত রাখা হবে (বড় গামলা ও ফ্রিজ), সে জায়গাও আগে থেকেই পরিষ্কার করুন ধুয়ে-মুছে।

যে প্যাকেটে গোশত সংরক্ষণ করা হবে, খেয়াল করুন সেটাও যেন থাকে পরিষ্কার ও শুকনা।

চর্বি ছাড়ানো:

গোশতের চর্বি একটি বড় সমস্যা। একে তো তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর, আবার রান্নার সময়ও ঝামেলা তৈরি করে। গোশতের তেল-চর্বি ছাড়াতে কাটার সময়ই খেয়াল রাখতে পারেন, যেন গোশতের গায়ে চর্বি না থাকে। গরু বা খাসির গোশতে আলাদা করে চর্বির লেয়ার থাকে। সেগুলো ফেলে দেয়াই ভালো।

গোশত সংরক্ষণে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:

গরিব-দুস্থ আর স্বজনদের মাঝে গোশত বিলি করার অতিরিক্ত ফ্রিজে ওঠানোর কাজে খুব বেশি দেরি করা উচিত নয়। তবে বেশি তাড়াহুড়া করে গরম গোশত (কাটার পর যেমন থাকে) উঠিয়ে রাখাটাও ঠিক নয়।

ফ্রিজে ওঠানোর আগে গোশত লেগে থাকা বাড়তি রক্ত থাকলে, তা কিচেন টাওয়েল কিংবা পাতলা ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন। তবে যে গোশত ফ্রিজে উঠিয়ে রাখা হবে, তা পানিতে ভেজানো যাবে না।

গোশতের প্যাকেটে লেবেল করে বা ট্যাগ লাগিয়ে রাখতে পারেন। যেমন কিমা, কলিজা, মগজ ইত্যাদি। এতে পরবর্তীকালে খুঁজে বের করতে সুবিধা হয়।

এমনভাবে গোশত প্যাক করুন, যাতে বের করার পর সেই প্যাকেটের গোশত একদিনেই রান্না করা হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী বুঝে শুনে প্রতিটি প্যাকেটের জন্য পরিমাণ নির্ধারণ করুন।

মনে রাখতে হবে, বেশি গোশত যদি একসঙ্গে প্যাক রাখুন, তাহলে একবার প্যাকেট ফ্রিজ থেকে বের করে পানিতে ভিজিয়ে গোশত ছুটিয়ে কিছুটা রান্না করার পর বাকি গোশত উঠিয়ে রাখতে হয়। এতে করে গোশতের স্বাদ ও গুণগত মান নষ্ট হয়। জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে।

গোশতের প্যাকেট এমনভাবে করতে হবে, যেন প্যাকেটের মোটামুটি অর্ধেকটা অংশ খালি থাকে। প্যাকেটগুলো খামের মতো সমান ও সুন্দর করে ভাঁজ করতে চেষ্টা করুন।

ফ্রিজে একটা প্যাকেট রেখে তার ওপর খবরের কাগজ বিছিয়ে দিন। এর ওপর আরেকটি প্যাকেট রাখুন। এভাবে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখলে একটা প্যাকেট অন্যটির সঙ্গে লেগে যায় না।

ফ্রিজের ওপরের দিকের তাকে মগজ, কিমা, কলিজা, ছোট গোশত ইত্যাদি রাখুন। বড় গোশত ও হাড়ের প্যাকেটগুলো রাখুন নিচের দিকে। নইলে বড় হাড়ওয়ালা গোশতের নিচে চাপে পিষ্ট হতে পারে।

ডিপফ্রিজের সবচেয়ে নিম্ন তাপমাত্রায় গোশত সংরক্ষণ করা উচিত। ডিপফ্রিজের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় গোশত ৫-৭ মাস ভালো থাকে।

 সংরক্ষণের সময়কাল:

কাঁচা গোশত ফ্রিজে সর্বোচ্চ তিন-পাঁচ দিন রাখা যায়, ডিপফ্রিজে পাঁচ-ছয় মাস।

গোশতের কিমা ফ্রিজে এক-দুই দিন, ডিপফ্রিজে দুই-তিন মাস রাখা যাবে।

রান্না গোশত ফ্রিজে এক-দুই দিন, ডিপফ্রিজে দুই-তিন মাস ভালো থাকে।

চপ, কাটলেট, কাবাব ফ্রিজে তিন-চার দিন, ডিপফ্রিজে তিন-চার মাস ভালো থাকে।

 

টাইমস/এসআই

 

Share this news on: