আওয়ামী পরিবারের শ্রাবণ ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী

 

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। ২৭ বছর পর দেশের অন্যতম ‍বৃহৎ এ ছাত্র সংগঠনটির কাউন্সিলকে ঘিরে ইতোমধ্যে ঘরে-বাইরে ব্যাপক আলোচনায় ছাত্রদল।

এ কাউন্সিলকে ঘিরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার  প্রতিটি পদক্ষেপই সঠিক বলে মেনে নেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কাউন্সিল ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনাও ছড়িয়ে পড়েছে।

কিন্তু ছাত্রদলের চূড়ান্ত সভাপতির প্রার্থী তালিকায় কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের নাম থাকায় হঠাৎ পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সম্পূর্ণ আওয়ামী পরিবারের সন্তান শ্রাবণকে চূড়ান্ত সভাপতি প্রার্থী করায় উৎসাহ উদ্দিপনায় ভাটা পড়ে। বর্তমান ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে নেমে আসে হতাশা। এমনকী বিএনপি ও অন্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে  অনেকেই ছাত্রদলের রাজনীতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

তাদের মতে, ছাত্রদলের সেই সোনালী অতীত আর নেই। ছাত্রদলের এতটা দৈন্যতা হয়নি যে, আওয়ামী পরিবারের সন্তানকে ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করতে হবে। ছাত্রদলের মধ্যে অনেক মেধাবি, ত্যাগী ও যোগ্য নেতা আছে। তাদেরকে সঠিক মূল্যায়ন কেন করা হচ্ছে না? যদি সঠিক মূল্যায়ন হয়, তাহলে কমপক্ষে ২০ জনকে পাওয়া যাবে। যারা ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার মত যোগ্য। সিন্ডিকেটের কারণে তারা হয়তো যোগ্যতার মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। সেজন্য কী আওয়ামী পরিবারের সন্তানকে মেনে নিতে হবে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে।

রফিকুল ইসলামের বড় ছেলে কাজী মুস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মেঝ ছেলে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। সেঝ ছেলে কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। আর রফিকুল ইসলামের ছোট ছেলে রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। কেশবপুরে কাজী পরিবারের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় এখন সর্বত্র এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছে।

কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শ্রাবণ ছাত্রদলের নেতা হওয়ায় আমার বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই ও এক বোন। সবার ছোট শ্রাবণ। মেধাবি ছাত্র। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত। রাজনীতির কারণে ১৫ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ বিষয়ে কেশবপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মুখোশের আড়ালে নিজেকে বেশি ক্ষণ লুকানো যায় না। কাজী রফিকুল ইসলাম দলের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে আনারস মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তার সঙ্গে শ্রাবণও ছিল।’

এদিকে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গ্রুপের রাজনীতি করেন শ্রাবণ। টুকু গ্রুপ থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পায় শ্রাবণ। এতে টুকু গ্রুপের মধ্যে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানা গেছে। কেননা টুকু গ্রুপের প্রভাবশালী প্রার্থী ফজলুর রহমান খোকন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। খোকনের সাথে টুকু গ্রুপের বেশিরভাগ নেতা কাজ করছেন। এ নিয়ে টুকু গ্রুপের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আওয়ামী পরিবারের সন্তান শ্রাবণকে চূড়ান্ত করবেন, তা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

তাদের মতে, শ্রাবণ ছাত্রদলের রাজনীতি শ্রম দিয়েছে। হামলা মামলার শিকার হয়েছে। সেজন্য তাকে অন্যভাবেও মূল্যায়ন করা যাবে। কিন্তু শ্রাবণের চেয়ে আরও ত্যাগী যোগ্য ও পরিশ্রমী নেতাও গ্রুপে আছে। তাহলে তাদের মূল্যায়ন করা হবে না কেন?

 

টাইমস/এমএস/এসআই

 

Share this news on: