আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট: এক বীর সেনাপতির গল্প

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। প্রাচীন গ্রিসের মেসিডোনিয়া রাজ্যের এক মহান অধিপতি। তিনি দার্শনিক এরিস্টটলের শিষ্য। একজন বীর যোদ্ধা। একজন বিখ্যাত বিজেতা। তিনি প্রাচীন গ্রিসের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং তার নেতৃত্বেই গ্রিস পারস্য সম্রাজ্য জয় করেছিল। তাই তাকে বিশ্ব ইতিহাসের শীর্ষ বীর সেনাপতিদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৩৫৬ খ্রিস্টপূর্বের ২০ জুলাই প্রাচীন গ্রিসের মেসিডোনিয়া রাজ্যের পেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন আলেকজান্ডার। তার বাবা মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও মা রানী অলিম্পিয়া। রাজা ফিলিপ অধিকাংশ সময়ই যুদ্ধ ও রাজ্য জয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাই শৈশবে ভাল করে বাবার সঙ্গে পরিচয়টুকু হয়নি তার। বাবার মৃত্যু পর বিশ বছর বয়সে তিন মেসিডোনিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজত্বের অধিকাংশ সময়ই তিনি যুদ্ধ ও রাজ্য জয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

তিনি এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকায় অসংখ্য সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তার বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ফলে সেই সময়ে গ্রিকরা ইউরোপ থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারত পর্যন্ত সম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। শৈশবে তার গৃহ শিক্ষক ছিলেন বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি এরিস্টটলের কাছে পড়াশোনা করেছেন।

৩৩৬ খ্রিস্টহপূর্বে রাজা ফিলিপের মৃত্যুর পর তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। ৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বে তিনি পারস্য সম্রাজ্য আক্রমণ করেন। ইসাস ও গোগামেলাসহ অসংখ্য যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে আনাতোলিয়া জয় করেন। তিনি রাজা তৃতীয় দারিয়াসকে উৎখাত করে সমগ্র আচেমিডীয় সাম্রাজ্য (পারস্য সম্রাজ্য) অধিকার করেন। সেই সময়ে তাঁর সাম্রাজ্য অ্যাড্রিয়াটিক সাগর থেকে সিন্ধু নদী পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল।

এশিয়া মাইনর (বর্তমান তুরস্ক) থেকে শুরু করে একে একে তিনি সিরিয়া ও মিশর জয় করেন এবং মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াকে রাজধানী ঘোষণা করেন। ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে তিনি পূর্ব-ইরান জয় করেন এবং রাজকুমারী রোক্সানাকে বিয়ে করেন। একসময় বিশ্বের শেষ প্রান্তপর্যন্ত রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন নিয়ে ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন। তিনি ঝিলাম নদির তীরে হাইডাস্পেসের যুদ্ধে পাওড়োদের পরাজিত করেছিলেন। এসময় তার সৈন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়লে আলেকজান্ডার সৈন্যদের নিয়ে ফিরে আসেন। ফেরার পথে ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে ইরাকের ব্যবিলনে অসুস্থ হয়ে মারা যান এই বীর সেনাপতি।

আর তার মৃত্যুর পর মেসিডোনিয়ায় গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তার সম্রাজ্য অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভিক্ত হয়ে পড়ে।
আলেকজান্ডার অন্তত বিশটি নগর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা এখনও তার নাম বহন করে। যার অন্যতম হল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া। তিনি যেখানেই রাজ্য বিস্তার করেছেন সেখানেই প্রাচীন গ্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে।

গ্রিক সংস্কৃতির মাধ্যমে হেলেনীয় সভ্যতা নামে এক নতুন সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। পনেরো শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যগুলো যার স্বাক্ষর বহন করেছিল। সামরিক দক্ষতা ও বীরত্বপূর্ণ জীবনের মাধ্যমে নিজেকে একজন কিংবদন্তি হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেনাপতি আলেকজান্ডার। সারা বিশ্বের সামরিক একাডেমিতে এখনও তার সামরিক কৌশল শিক্ষা দেয়া হয়।
তাই ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়- আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: