হাতি রক্ষায় বড় উদ্যোগ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বসছে রোবটিক ক্যামেরা

সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের ২৭ কিলোমিটার অংশ। এমন জায়গায় রেললাইন তৈরি করা হয়েছে, যেটি ছিল এশিয়ান হাতির করিডর (চলচলের পথ)। এভাবে লাইন স্থাপনের কারণে হাতির চলাচলের পথে বাধা তৈরি হয়। যদিও হাতির চলাফেরা নির্বিঘ্ন করার জন্য রেললাইনের ওপর নির্মাণ করা হয় ওভারপাস ও আন্ডারপাস।

এর পরও দুর্ঘটনা ঘটছে।

এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে এবার রেলওয়ে বসাচ্ছে ৬টি আধুনিক সেন্সর বিশিষ্ট রোবটিক ক্যামেরা। বিদেশ থেকে আনা এসব যন্ত্র হাতির অবয়ব শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক সংকেত পাঠাবে। সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেললাইনের পাশে লাল বাতি জ্বলে উঠবে, যা দেখে ট্রেনচালক গতি কমিয়ে ট্রেন থামাবেন।

সেন্সর-ক্যামেরা এবং সংকেতবাতি একই সঙ্গে কাজ করবে, যাতে রাত বা কুয়াশার মধ্যেও হাতি শনাক্ত করা যায়। এতে বেঁচে যাবে হাতি। কমবে দুর্ঘটনাও।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ৬টি ক্যামেরা, সংকেতবাতি ও বৈদ্যুতিক কাজ মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

চলতি বছরের মধ্যেই এই প্রকল্প শেষ করার ইচ্ছা আছে রেলওয়ের। এরই মধ্যে ট্রেনচালক ও পরিচালকদের (গার্ড) এক দফা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যেখানে সংকেত পাওয়া মাত্র কীভাবে দ্রুত গতি কমিয়ে ট্রেন থামাতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প শেষ হলে আরো প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

চুনতি, ফাঁসিয়াখালী ও মেধাকচ্ছপিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল দিয়ে যে রেলপথ গেছে, সেখানে রয়েছে প্রায় ৪০-৫০টি এশিয়ান হাতি। বছরের বিভিন্ন সময়ে এরা বাঁশখালী, লোহাগাড়া ও চকরিয়ার বনে বিচরণ করে।

খাবার বা পানির খোঁজে চলাচলের সময় তাদের রেললাইন পার হতে হয়, যা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে।

প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্যামেরাগুলো হাতির অবয়ব চিহ্নিত করতে পারবে। যদি কখনো হাতি বা হাতির পাল রেললাইনে চলে আসে, তাহলে তা ছবি আকারে সিগন্যাল বা সংকেত পাঠাবে। এই সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেললাইনের পাশে থাকা লাল বাতিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠবে। এ লাল বাতি দেখে চলন্ত ট্রেনের লোকোমাস্টার বুঝতে পারবেন, রেললাইনে হাতির পাল বা হাতি রয়েছে। তখন তিনি ট্রেনের গতি কমাবেন বা প্রয়োজনে থামাবেন। পরে হাতি চলে গেলে গতি বাড়াবেন।’

২০২৪ সালের ১৩ অক্টোবর চুনতি এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতি আহত হয়ে মারা যায়। হাতিটিকে উদ্ধার করে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দুই দিন পর মারা যায়। সেই ঘটনার পর ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান এলাকায় ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে।

২০২৫ সালের ২২ জুলাই রাত ১০টা ২৫ মিনিটে একই এলাকায় আরেকটি দুর্ঘটনা অল্পের জন্য এড়ানো যায়। সৈকত এক্সপ্রেসের চালক আবদুল আওয়াল দূর থেকে রেললাইনে দাঁড়ানো একটি হাতি দেখে হার্ড ব্রেক চেপে ট্রেন থামিয়ে দেন। যদিও হাতির পালে থাকা আরেকটি হাতি ‘বিরক্ত’ হয়ে ট্রেনের শেষ বগিতে ধাক্কা দেয়, তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন এই পথে দিনে ও রাতে চার জোড়া ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে।

পিএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জামায়াতের জোটে যোগ দিচ্ছে এবি পার্টি: ব্যারিস্টার ফুয়াদ Dec 29, 2025
img
জকসুতে ভিপি পদে লড়ছেন একমাত্র সনাতনী প্রার্থী গৌরব ভৌমিক Dec 29, 2025
img
দলীয় পরিচয় স্বীকার করতে চান না ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেলের প্রার্থী Dec 29, 2025
img
'শুধুমাত্র নিরপরাধ মানুষকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম' , সিডনিতে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো আহমেদ Dec 29, 2025
img
ঠিকানায় গিয়েও সন্ধান মেলেনি কাদেরসহ যুবলীগ-ছাত্রলীগের শীর্ষ ৭ নেতার Dec 29, 2025
img
টেনিসে ৫২ বছর আগের স্মৃতি ফেরালেন সাবালেঙ্কা-কিরিওস Dec 29, 2025
img
ফেনী-২ আসনে মঞ্জুকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জামায়াত প্রার্থী Dec 29, 2025
img
নির্বাচনে ৩৫ হাজার বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 29, 2025
img
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না মাহফুজ আলম Dec 29, 2025
img
বিএনপি ছেড়ে জামায়াতের জোটে যাওয়ার কারণ জানালেন কর্নেল অলি Dec 29, 2025
img
ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Dec 29, 2025
img
নাগরিকদের প্রেম করার জন্য অর্থ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার Dec 29, 2025
img
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে ‘আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা Dec 29, 2025
img
নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত : শামা ওবায়েদ Dec 29, 2025
img
ইন্দোনেশিয়ায় ৮ কোটি ছাত্রছাত্রী পাচ্ছে বিনামূল্যে খাবার Dec 29, 2025
img
মনোনয়নপত্র জমা দিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর Dec 29, 2025
img
পি কে হালদারসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দুদকের Dec 29, 2025
img
রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি চুক্তি ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’: ট্রাম্প Dec 29, 2025
img

বগুড়া-৭

খালেদা জিয়ার টিপসই দেওয়া মনোনয়নপত্র জমা দিলেন নেতারা Dec 29, 2025
img
স্বরাষ্ট্র উপ‌দেষ্টা হওয়ার বিষয়‌টি গুজব : খলিলুর রহমান Dec 29, 2025