ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যে প্রবল বর্ষণের কারণে বন্যা দেখা দেয়ায় গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধের ১১৯টি গেইটের সবগুলোই সোমবার খুলে দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়াতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা বিপদসীমার ওপরে উঠে গেছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় হার্ডিঞ্জ সেতু পয়েন্টে পানির উচ্চতা বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা ৮ সেন্টিমিটার বাড়ে। যেভাবে পানির উচ্চতা বাড়ছে, তাতে এবার ১৬ বছরের রেকর্ড ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
এদিকে রাজশাহীতে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি চার সেন্টিমিটার বেড়েছে। আর আগের দিন সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে তিন সেন্টিমিটার।
পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।
ভারতীয় গণমাধ্যম কলকাতা টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক খবরে বলা হয়, হিমালয়ের নিকটবর্তী এলাকায় বিশেষ করে নেপালে প্রবল বর্ষণের কারণে সেখানকার নদীগুলোর পানির স্তর বাড়তে শুরু করেছে। বেশিরভাগ নদী ভারতের উত্তর বিহারকে প্লাবিত করছে। তার সঙ্গে পুরো বিহারই প্রবল বন্যায় ভাসছে। ফলে বিহার থেকে আসা বিপুল পানি আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি ফারাক্কা ব্যারেজে।
খবরে আরও বলা হয়, সোমবার রাতেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া ফারাক্কার সবকটি লক গেট খুলে দেয়া হয়। পানি বাড়তে থাকে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায়।
এদিকে পানি ক্রমেই বাড়তে থাকায় গড়াই নদের পানি ফুলে উঠেছে। এতে কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। সকাল ছয়টায় গড়াইয়ে কুমারখালী রেলসেতু পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। গড়াইয়ের বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পদ্মার পাশাপাশি শাখা গড়াই নদেও পানি বেড়ে যাচ্ছে। পদ্মা ও গড়াই সংলগ্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরেও পানি প্রবেশ করেছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, রাতের বেলায় পানি বাড়ার হার বেশি হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ৮ সেন্টিমিটার বাড়ে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা
পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নদীর পানি বেড়ে যে বন্যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তার মূল কারণ অতিবর্ষণ; ফারাক্কা বাঁধ নয়।
মঙ্গলবার মতিঝিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া এ কথা বলেন।
টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজানে পানি বাড়ায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও নাটোর অঞ্চলে স্বল্পকালীন বন্যা হতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া দাবি করেন, 'এই যে বন্যা পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে আসলে ভারতীয় অংশের ফারাক্কা বাঁধের কোনো প্রভাব নেই। এই মৌসুমে ভারত অংশের ফারাক্কা বাঁধের গেইটগুলো খোলাই থাকে। এই সময় নদী যে আচরণ করে তা খুবই স্বাভাবিক আচরণ।'
তিনি বলেন, গত জুলাই মাসের বন্যাও হয়েছিল ভারী বৃষ্টির কারণে। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে এখন একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের একাংশ ওইখানে আগে থেকেই খোলা ছিল। এখন আমাদের দেশে যে পানিটা আসছে সেটা বৃষ্টিপাতের কারণে।
ভারী বৃষ্টির কারণে ভারতের বিহারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকাতেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আরিফুজ্জামান বলেন, 'ভাটির দেশ হওয়ায় সেই পানিটা অবশ্যই আমাদের অংশের নদ-নদী দিয়ে প্রবাহিত হবে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে আমাদের মধ্যাঞ্চল হয়ে পানিটা নেমে যাবে। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।'
ফারাক্কা নিয়ে এক প্রশ্নে আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, 'নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহটাই এখন বজায় থাকছে। বাঁধের মূল কাজ শুকনো মৌসুমে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়টায় পানির স্বল্পতা থাকে। তখন সেই পানিটা ধরে রাখার জন্য এই বাঁধ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাঁধ মূলত কাজ করে তখন। নদ-নদীতে যখন পানি বাড়ে তখন আর বাঁধের গেইট বন্ধ রাখা যায় না, খুলে দিতে হয়।'
টাইমস/এসআই