রাবি উপ-উপাচার্যের চাকরি দিতে দর কষাকষির ফোনালাপ ফাঁস!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার ৫৫ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। যেখানে তিনি চাকরি দিতে সাদিয়া নামে এক মেয়ের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন বলে শোনা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে ফোনালাপ করা সাদিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরিপ্রার্থী ছিলেন তার স্বামী ও আইন বিভাগের সাবেক (বিভাগের ৩৪ ব্যাচের) শিক্ষার্থী নূরুল হুদা।

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে অনার্সে ৩.৬৫ ও মাস্টার্সে ৩.৬০ সিজিপিএ পেয়ে পাস করেন। আইন অনুষদে সেরা হওয়ায় ২০১৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান। তার বাড়ি চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার এলাকা লালমনিরহাটে।

পাঠকদের জন্য ফোনালাপটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া : হ্যাঁ সাদিয়া, আমি প্রফেসর জাকারিয়া, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর।

নারীকণ্ঠ : আসসালামু আলাইকুম স্যার।

উপ-উপাচার্য : ওয়ালাইকুম আসসালাম, আচ্ছা মা, একটা কথা বলতো, আমার খুব শুনতে ইচ্ছা যে, এখানে তোমরা কত টাকা দেয়ার জন্য রেডি আছ?

নারীকণ্ঠ : স্যার সত্যি কথা বলতে...।

উপ-উপাচার্য: না না, সত্যি কথাই তো বলবা। উপরে আল্লাহ তায়ালা, নিচে আমি।

নারীকণ্ঠ: অবশ্যই, অবশ্যই। স্যার, আপনি যেহেতু তার অবস্থা জানেন, আরেকটা বিষয় এখানে স্যার, সেটা হচ্ছে, আপনি হুদার... মানে, এমনিতে সে কতটা স্ট্রিক্ট..., আপনি বোধহয় এটাও জানেন স্যার, একটু রগচটা ছেলে।

উপ-উপাচার্য : আচ্ছা রাখো, এখান থেকে কথা বলা যাবে না।

ফাঁস হওয়া অডিও এডিট করা হয়েছে দাবি করে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এ বিষয়ে মঙ্গলবার লিখিত বক্তব্যে বলেন, নুরুল হুদা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার ছাত্র জীবনের শুরু থেকে আমি স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দেখভাল করছি। তার লেখাপড়ার চলমান রাখতে তাকে দুটি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি নুরুল হুদা চাকরি পেতে অসাধু কিছু ব্যক্তির কবলে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছে।

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ইসলামী ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার একটি স্লিপও আমার নজরে আসে। স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে তার এহেন অসাধুকর্ম রোধে খোঁজ নেওয়ার জন্য তার স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলাম। কারণ হুদার স্ত্রীর বাড়ি সৈয়দপুরে। হুদার স্ত্রী সেসময় ব্যাংক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকারও করে বিস্তারিত বলতে রাজি হয়নি।

নুরুল হুদার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিক অনেক কিছুই জানেন। আমার এই বিষয়ে কিছু বলার নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ওই বিভাগে প্রভাষক পদে তিন জন শিক্ষকের নিয়োগ হয়েছে। যার বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল ২০১৮ সালের মার্চে এবং ওই বছরের ১৩ নভেম্বর নিয়োগের ভাইবা অনুষ্ঠিত হয়। আর ১৭ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ অনুমোদিত হয়। এর পরদিন ১৮ নভেম্বর নিয়োগপ্রাপ্তরা বিভাগে যোগদান করেন।

নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- উপ-উপাচার্যের মেয়ের জামাই সাইমুন তুহিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডুর মেয়ে নূর নুসরাত সুলতানা। নুসরাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছে। অন্যজন হচ্ছেন রাবির আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী বনশ্রী রানী। এই তিন জনের চেয়ে বেশি পয়েন্ট থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ পাননি মোহাম্মদ নূরুল হুদা।

৫ সদস্য বিশিষ্ট ওই নিয়োগ ভাইভা বোর্ডে সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। এছাড়া সিনেট সদস্য রুস্তম আলী, বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শাহাজান মণ্ডল এবং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও উপ-উপাচার্য।

অধ্যাপক শাহাজাহান বলেন, ওই নিয়োগের ভাইভা হওয়ার দুই-একদিন আগ থেকে কয়েকজন শিক্ষক আমাকে সজাগ থাকতে বলেন। ওই নিয়োগে আর্থিক লেনদেন হতে পারে বলে তারা জানিয়েছিলেন।

স্বর্ণপদক পাওয়া নূরুল হুদাকে কী কারণে বাদ দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকদিন আগের বিষয় তো, ভুলে গেছি।

জানা গেছে, নূরুল হুদার নিয়োগ না হওয়ার বিষয়টি জানার পর ওই সময় কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য নিয়োগপ্রাপ্তদের জীবনবৃত্তান্ত খোঁজ নিতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, নূরুল হুদা নিয়োগ না পাওয়ায় আমরা বিস্মিত হই। পরে কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য যে তিন জন শিক্ষক প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের বিষয়ে তথ্য চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার জানান, ওই ফাইলগুলো ক্লোজ করা হয়েছে।

 

টাইমস/এএইচ/এসআই

Share this news on: