গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা ও করণীয়

গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার কথা শুনলেই অনেকে হয়তো ভয় পেয়ে থাকেন। আসলে ভয়ের কিছু নেই। তবে সব কিছুই জেনে রাখা প্রয়োজন। পানি ভাঙার লক্ষণ দেখা দিলেই গর্ভবতী নারীদের উচিত অনতিবিলম্বে নিকটস্থ চিকিৎসককে অবহিত করা।

পানি ভাঙা আসলে কী
গর্ভবতী নারীদের পেটে এক ধরণের তরল পদার্থ ভেসে থাকে। একে বলা হয়- এমনিওটিক ফ্লুইড, আর যে থলের মধ্যে এই এমনিওটিক ফ্লুইড থাকে তাকে বলা হয় এমনিওটিক স্যাক। এমনিওটিক স্যাক বা থলে ফেটে গেলে শরীর থেকে পানির মত পদার্থ মাসিকের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যেতে থাকে। এ পানি ভাঙ্গাকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয়- প্রি-লেবার রাপচার অব মেমব্রেন বা PROM।

অনেক গর্ভবতী নারীরা এ নিয়ে শঙ্কিত থাকেন। দেখা যায়, কোনো কারণে যদি মাসিকের রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত পানি বের হয়, তখন তারা ধরে নেন- এটা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড।

চিকিৎসকদের মতে, অনেক কারণেই এমন সিক্রেশন হতে পারে। যেমন ইউরিন বা প্রস্রাব যদি বের হয়, তাহলেও একে এমনিওটিক ফ্লুইডের মতোই মনে হতে পারে। গর্ভবতী অবস্থায় ভ্যাজাইনাল সিক্রেশন অনেক বেড়ে যায়, ফলে মাঝে মাঝে এই নরমাল সিক্রেশনকেও এমনিওটিক ফ্লুইড ভেবে অনেকে ভুল করে থাকেন।

কিভাবে সঠিক ডায়াগনোসিস সম্ভব
গর্ভবতী নারীর হিস্ট্রি জেনে চিকিৎসকরা কিছুটা আইডিয়া করতে পারেন আসলেই মেমব্রেন রাপচার হয়েছে কিনা। মেমব্রেন রাপচার হলে সাধারণত একসঙ্গে অনেক পানি বের হবে। এছাড়া স্পেকুলাম এক্সামিনেশনের মাধ্যমে জরায়ুর মুখ সরাসরি দেখেও নিশ্চিত হওয়া যায়।

তবে, অনেক মায়েদের ধারণা আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে এর ডায়াগনোসিস সম্ভব। আসলে আল্ট্রাসনোগ্রাম শুধু বলতে পারবে তার এমনিওটিক ফ্লুইড কতটা আছে। কিন্তু মেমব্রেন রাপচার হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য মিলবে না।

ফলাফল
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এমনটি হয়ে থাকলে একে সাধারণত অ্যাবরশন হিসেবেই ধরা হয়। আর যদি বাচ্চা ম্যাচিওর হতে কিছুদিন বাকি থাকে, তবে রোগীকে হাসপাতালে বেড রেস্টে রেখে বাচ্চার ম্যাচিওরিটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর এর মধ্যেই লেবার পেইন বা ইনফেকশনের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে সেই গর্ভাবস্থা আর নিয়মিত করা সম্ভব হয় না।

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পানি ভাঙলে মাকে ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এ অবস্থায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে লেবার পেইন উঠে যায়। যদি পেইন না থাকে, তবে ইন্ডাকশন (ওষুধের মাধ্যমে লেবার পেইন শুরু) করাও সম্ভব।

সতর্কতা
এমনিওটিক ফ্লুইড গর্ভস্থ বাচ্চাকে বাইরের জীবাণু থেকে রক্ষা করে। তাই মেমব্রেন রাপচার হলে রোগীকে জীবাণুমুক্ত প্যাড ব্যবহার করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, এন্টিবায়োটিক শুরু করা হয়। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড রাপচার বা পানি ভাঙার লক্ষণ দেখা দিলে গর্ভবতী নারীদের উচিত অনতিবিলম্বে তার নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ব্যর্থ হলে ইন্টেরিম সরকারকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না : মামুনুল হক Dec 01, 2025
img
দীর্ঘদিনের গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে সত্যি সত্যি বিয়ে করলেন সামান্থা Dec 01, 2025
img
ভারতীয় গণমাধ্যমে ইমরান খানের বোনদের সাক্ষাৎকারে নতুন বিতর্ক Dec 01, 2025
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস: কমিশন Dec 01, 2025
সেন্টমার্টিনে মৌসুমের প্রথম জাহাজ যাত্রা, পর্যটক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ Dec 01, 2025
'আরেকটা পিলখানা হওয়ার সম্ভাবনা আছে' Dec 01, 2025
img
আল্লাহ খালেদা জিয়াকে সম্মান দিয়েছেন: দিপু ভূঁইয়া Dec 01, 2025
img
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার না করার অনুরোধ Dec 01, 2025
img
যাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ডিবি কার্যালয়ে সাদিক কায়েম Dec 01, 2025
img
ডেঙ্গুতে ১ দিনে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬১০ Dec 01, 2025
img
ভোটারই হননি তারেক রহমান, নির্বাচনের প্রার্থী হবেন কিভাবে? Dec 01, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে ভুয়া তথ্যে পাসপোর্ট করাতে গিয়ে রোহিঙ্গা যুবক আটক Dec 01, 2025
img
একনেকে ১৬ হাজার কোটি টাকার ১৮ প্রকল্পের অনুমোদন Dec 01, 2025
img
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো আইনি বাধা নেই: আসিফ নজরুল Dec 01, 2025
img
খুলনায় ৮ দলের সমাবেশে যোগ দিলেন জামায়াতের আমির ও চরমোনাই পীর Dec 01, 2025
img
বরিশালে জামায়াতসহ ৮ দলের সমাবেশ মঙ্গলবার Dec 01, 2025
img
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান Dec 01, 2025
img
ধর্মেন্দ্রর শেষকৃত্য নিয়ে হেমার দুঃখপ্রকাশ Dec 01, 2025
img
ফ্রান্সে হাইস্কুলে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ Dec 01, 2025
বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে যা বললেন বিএনপি নেতা আযম Dec 01, 2025