গ্রিনলাইনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে হাইকোর্ট

দুর্ঘটনায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করলেও পরিশোধ করেনি গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বুধবার হাইকোর্ট আগামী ২২ মের মধ্যে ক্ষতিপূরণের বাকি অর্থ পরিশোধ করতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে।

রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিয়ে বাকি অর্থ দিতে এক মাস সময় নিয়েছিল গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও আর কোনো অর্থ এই বাস কোম্পানি পরিশোধ করেনি। বুধবার হাইকোর্ট তা জানার পর কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে ২২ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ওই দিন পরবর্তী আদেশের জন্য মামলাটি রেখেছে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলাটির শুনানি চলছে।

আদালতে গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অজি উল্লাহ। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

শামসুল হক রেজা বলেন, আদালতের আদেশের পর এককালীন ৫ লাখ টাকা ও চিকিৎসার জন্য ৩ লাখ টাকা দিয়েছে গ্রিনলাইন। বাকি ৪৫ লাখ টাকা এক মাসের মধ্যে দেয়ার কথা। কিন্তু আর কোনো টাকা দেয়নি।

আইনজীবী অজি উল্লাহ গ্রিনলাইনের পক্ষে সময় আবেদন করলে তাদের জ্যেষ্ঠ বিচারক জিজ্ঞেস করেন, ‘টাকা দিয়েছেন?’

অজি উল্লাহ বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য খরচ দিচ্ছি।’

‘বাকি টাকা (৪৫ লাখ) দিয়েছেন? কথা ছিল এক মাসের মধ্যে বাকি টাকা দেবেন। টাকা তো দেননি। আর চিকিৎসার খরচ তো আলাদা ডাইরেকশন ছিল। সব চিকিৎসা খরচ দেবেন। টাকা দেননি কেন?’- বিচারক বলেন।

অজি উল্লাহ তখন বলেন, ‘টাইম চেয়েছি।’

বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, ‘একবার চাইলেন, সময় তো দিলাম। চার আনা পয়সাও পে না করে সময় চাইলেন! আপনাদের (গ্রিনলাইন) কি ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে? তা তো না। ব্যবসা চলছে। আমরা কি রিসিভার নিয়োগ দিয়ে দিব? একেবারে খালি হাতে চলে আসলেন। এটা কী করে হয়? সামনে কোর্টের ভ্যাকেশন আছে। তার আগে আদেশ বাস্তবায়ন করেন। তা না হলে কী করতে হয়, আমরা জানি। ২২ মে তারিখ রাখলাম।’

আদালতের বাইরে আইনজীবী শামসুল হক রেজা বলেন, ‘তারা একটা হলফনামা দিয়ে বলেছি যে তাদের মালিক অসুস্থ। সে জন্য সময় দরকার। আমাদের বক্তব্য ছিল যেহেতু উনাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে, অতএব যে কোনো লোকের মাধ্যমে বা ম্যানেজারের মাধ্যমে চেক বা টাকা দিতে পারে। ওদের আইনজীবী সময় চেয়েছেন। এরপর আদালত ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। ওই তারিখের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করবেন।’

গত বছরের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয় প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে। তাকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।

রাসেলের পা হারানোর ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনজীবী উম্মে কুলসুমের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রয়োজন হলে তার পায়ে অস্ত্রোপচার এবং কাটা পড়া বাঁ পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচ দিতে ওই পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।

এরপর গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বাকি ৪৫ লাখ টাকা এক মাসের মধ্যে দিতে গ্রিনলাইনের মালিককে সময় দিয়েছিল আদালত।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: