নারায়ণগঞ্জের মসজিদের ঘটনাটা কেন ঘটল সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদে এ ধরনের বিস্ফোরণ খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওইটুকু একটা জায়গায় ৬টা এসি লাগানো। আবার শোনা যাচ্ছে গ্যাসের লাইনের ওপরেই নাকি এই মসজিদটা নির্মাণ করা হয়েছে। সাধারণত যেখানে গ্যাসের পাইপলাইন থাকে সেখানে নির্মাণ কাজ হয় না। জানি না এটা কতটা সত্য। জানি না রাজউক থেকে এটার পারমিশন দিয়েছে কিনা। কারণ এখানে পারমিশন তো দিতে পারে না, দেওয়া উচিত নয়। এতে সব সময় আশঙ্কার ব্যাপার থাকে। সেটাই এখন তদন্ত করে দেখা হবে।
রবিবার জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মসজিদে সবাই দান করে, আজকাল তো সকলের পয়সা আছে, এয়ারকন্ডিশন দিয়েছে। সেখানে এই যে বিদ্যুৎ সরবরাহটা, বিদ্যুৎ কতটা নিতে পারবে? সেটার ক্যাপাসিটি ছিল কি-না, সার্কিট ব্রেকার ছিল কি-না-এসব বিষয়গুলো কিন্তু দেখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে তার একটা দুর্ঘটনা অবশ্যই ঘটতে পারে।
ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা সেখানে গেছেন। সেখানে নমুনা সংগ্রহ করছেন। এই ঘটনাটা কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল সে বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং আমি মনে করি, সেটা অবশ্যই বের হবে।
তিনি বলেন, যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে আমার সঙ্গে কিন্তু সবসময় আমাদের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল মেসেজ পাঠান। প্রতিমুহূর্তে সকালে, বিকেলে মেসেজ পাঠাচ্ছে এবং রোগীদের অবস্থা জানাচ্ছে। অনেকে মারা গেছেন। বাকি যারা তাদের পোড়ার অবস্থা এত খারাপ তারপরও চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের সব ধরনের চিকিৎসা আমরা দিচ্ছি। এখন আল্লাহ যদি এদের জীবনটা দিয়ে যান।
ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে এবং নির্দেশ গেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছি এর কারণটা খুঁজে বের করার। সারা বাংলাদেশে মসজিদগুলোতে যারা অপরিকল্পিতভাবে, ইচ্ছামতো এয়ারকন্ডিশন লাগাচ্ছেন বা যেখানে সেখানে একটা মসজিদ গড়ে তুলছেন, সে জায়গাটা আ-দৌ একটা স্থাপনা করবার মতো জায়গা কি-না, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া বা সেখানে নকশাগুলো করা হয়েছে কি-না, সেই বিষয়গুলো কিন্তু দেখা একান্ত প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের ঘটনা দুর্ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে।
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন রোববার শুরু হয়েছে। বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদে সাবেক মন্ত্রী ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীসহ দেশে-বিদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ ও লেবাননে বিস্ফোরণে নিহতদের স্মরণে শোক প্রকাশ করা হয়। এর আগে সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিদের স্মরণ করে সংসদে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সংসদ সদস্য রুহুল আমীন মাদানী। পরে সংসদের বৈঠক সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
আরও পড়ুন
মসজিদে বিস্ফোরণ: অবহেলার অভিযোগে পুলিশের হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ: মৃত্যু বেড়ে ২৪
টাইমস/এইচইউ