একজন সাহসী মিরার গল্প, চাকরির পেছনে না ঘুরেও সফল!

কামরুন্নেসা মিরা। পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে। তবে পড়াশোনা শেষ করে তিনি চাকরির পেছন ছুটেননি। ব্যতিক্রমী কাজ করে সফল হয়েছেন তিনি। কৃষিকাজ, অবহেলিত নারীদের নিয়ে কাজ করে তিনি আজ মানবতার উদাহরণ তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে মিরার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন অল ফর ওয়ান সংগঠন ২০১৮ সালে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড জেতে। তিনি জেতেন প্রিন্সেস ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড।

এপর্যন্ত তিনি অর্ধশতাধিক শিশু উদ্ধার করেছেন যারা সমাজে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়েছে। তার এই সাহসী অভিযানগুলোর কথা শুনলে গা শিউরে উঠবে। নিজ উদ্যোগে নিজের খরচে এভাবে বাচ্চাদের উদ্ধার করে জায়গা দিয়েছেন নিজের প্রতিষ্ঠান জাগরণ পাঠশালায় যা রাজশাহীতে অবস্থিত।

২০১৭ সালে সর্ব প্রথম তিনি একটি শিশুকে উদ্ধার করেন, যার মা মারা যাওয়ার পর বাবা নতুন বিয়ে করেন। তাকে সৎ মায়ের ভাইয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। এমনকি তার বাবাও জোর করেন এই কাজে। এই মেয়েটিকে বাঁচিয়ে শুরু হয় মিরার যুদ্ধ। এরপর ঢাকার কচুক্ষেত থেকে তিনি একটা মেয়েকে উদ্ধার করেন, যাকে খুব খারাপ অবস্থায় পান মিরা। আট বছর বয়সি সেই মেয়েকে ঝিনাইদহ থেকে এনে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এই মেয়েকে উদ্ধার করে এভাবে বাচ্চাদের রাখার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করার কথা ভাবেন মিরা। এই ধরনের বহু ঘটনা রয়েছে তার জীবনে। ভাটারায় সাত বছর বয়সি এক মেয়ে তার বাবার কাছে ধর্ষণের শিকার হতে থাকে, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না তার মাও। এই মেয়েকে বাঁচিয়ে আনেন মিরা।

রাজশাহী থেকে একসঙ্গে আটটি বাচ্চা কিনে আনেন মিরা। মাঝে মাঝে তিনি মাদকাসক্ত অনেককে কিনে আনেন তার পাঠশালায়। রাজশাহীর এক পতিতালয় থেকে তিনি এক মহিলার কাছ থেকে ১৬টি বাচ্চা নিয়ে আসেন। এই সব বাচ্চা তাদের পরিচয়ে বড়ো হচ্ছে, মৌলিক চাহিদাগুলো সব পূরণ করেন তিনি। এই উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে অনেক ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন মিরা। এমনকি জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয়েছে তাকে।

শুধু তাই নয় ২৫ বছর বয়সেই তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন কামরুন্নেসা মিরা। কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন তিনি। তার সামাজিক ব্যবসায়িক সংস্থা ‘চাষীবোন’ একটি উদীয়মান ধারণা, যা কেবলমাত্র কৃষি ব্যবসা বিকাশই করেনি, দালাল নির্মূল করেছে এবং কৃষক ও ক্রেতাদের মধ্যে সুষ্ঠু বাণিজ্য নিশ্চিত করেছে।

স্নাতক শেষ করার পর মিরা চাকরির পেছনে না ছুটে ভ্রমণ এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান অনুসন্ধান করতে শুরু করেন। তার সামাজিক ব্যবসার মডেল কয়েকশ’ নারীকে বাল্যবিবাহ, সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং তাদের সম্প্রদায়ের বিকাশের সক্রিয় অংশে পরিণত করতে সহায়তা করে। ২০১৮ সালে তিনি এমন একটি বাস্তুতন্ত্রের বিকাশের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন, যেখানে কৃষকরা ন্যায্য দাম পেতে পারে।

মিরা এমন একটি আদর্শ গ্রামের পরিকল্পনা করেন, যেখানে তিনি একটি কৃষক ইউনিয়ন তৈরি করতে পারেন, তাদের স্মার্ট কৃষি, ফসল সংগ্রহ ও বিপণন সম্পর্কে শিখিয়ে দিতে পারেন। সেজন্য তিনি নাটোর জেলায় জমি কিনে নিজের কৃষি ব্যবসা শুরু করেন। কৃষকদের সাথে কাজ করে মিরা এখন একজন সফল নারী।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on: