দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু পায়রা সেতু।
গত ২৪ অক্টোবর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর থেকেই নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি দেশের পঞ্চম বৃহত্তম সেতু।
সেতুটির আয়তন ১৪৭০ মিটার বা ১.৪৭ কিলোমিটার। ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুর দুই পারে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে।
পানি প্রবাহের স্তর থেকে প্রায় ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে এ সেতু।
এই ব্রিজটি সর্বোচ্চ স্প্যান বিশিষ্ট ব্রিজ, পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে পায়রা নদীর মাঝখানে মাত্র একটি বড় পিয়ার স্থাপন করে গড়ে তোলা হয়েছে সেতুটি। ১৩০ মিটার গভীর পাইলিং করে বসানো হয়েছে পিয়ারটি।
এর ফলে এর নিচ দিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
পায়রা সেতুর কাজ শুরু হয় কবে?
পায়রা সেতুর জন্য পটুয়াখালীবাসীর অপেক্ষা দীর্ঘদিনের।
২০১২ সালের ৮ই মে এ সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।
২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালের ২৪শে জুলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
পুরো সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার
কোটি টাকা।
ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা সড়কের দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
গত কয়েক বছরে পটুয়াখালী, ও বরগুনা জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা ছিল পায়রা নদী। এখানে ফেরি পার হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগতো।
ফেরি ও সেতুর টোলের ব্যবধান কেমন?
পায়রা সেতুর টোল ফেরি ভাড়ার তুলনায় আড়াই থেকে ৭ গুণ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সেতুটির টোল নির্ধারণ নিয়ে পরিবহন সেক্টরের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও রয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
যেহেতু ফেরির ভাড়ার চেয়ে ক্ষেত্র বিশেষে আড়াই থেকে সাতগুণ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে টোল।
এতে বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে সড়ক পথে ভাড়া বাড়বে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও যাত্রীরা।
পায়রা সেতু কি সুফল বয়ে আনবে?
পায়রা সেতু প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই সেতুর ফলে পায়রা নদী বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন সৈকতের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পায়রা নদী বন্দর পুরোপুরি ব্যবহার করা শুরু হলে মালামাল বহনের ক্ষেত্রে এই সেতুটি বিশাল ভূমিকা রাখবে। এর ফলে যান চলাচলে কোন বিঘ্ন তৈরি হবে না।
অন্য সেতু থেকে এই সেতুতে নতুন কী আছে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সেতুতে নতুন কিছু বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। ভূমিকম্পের মত দুর্যোগ থেকে সেতুকে নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’।
ঝড়, সাইক্লোন, তাপমাত্রা বা ওভারলোডিং এর কারণে ব্রিজের যদি কোন ক্ষতি হয়, তাহলে সিগন্যাল দেবে। তখন তারা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
সেতুর ক্ষতি হতে পারে, এমন ভারী যানবাহন উঠলে সঙ্গে সঙ্গে এটি বিপদ সংকেত পাঠাতে শুরু করবে।