মেঘনার তীরে শতবর্ষী বাইশমৌজা হাট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরে খোলা জায়গায় শত বছর ধরে বসে আসছে একটি হাট। পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই হাটে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষেরা সপ্তাহের দুইদিন জড়ো হন এ হাটে৷

ব্রিটিশ আমলে এ হাটের নাম ছিল আছি মাহমু্দের হাট৷ হাটটি নিয়ে মেঘনা নদীর অপর পাড়ের আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরের সঙ্গে নবীনগরের বিবাদ লেগেই থাকত৷ স্বাধীনতার পরে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এই বাজারের নামকরণ করা হয় ‘বাইশমৌজা হাট’৷

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শতবর্ষী পুরনো এ হাটটি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গল এই দুইদিন বসে৷ তবে মঙ্গলবারে বাইশমৌজায় বসে বড় হাট৷ এদিন লোক সমাগমও অনেক বেশি হয়৷ হাটে স্থায়ী কোনো অবকাঠামো নেই৷ শুধু হাটের দিন এসে নির্দিষ্ট জায়গা নিয়ে বসে পড়েন বিক্রেতারা৷

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়কপথে এ বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হলেও এখনো এ হাটে যাতায়াতের প্রধান বাহন নৌকা৷ মেঘনা নদীর চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন এ বাজারে সবচেয়ে বেশি আসেন বলে নৌকাই তাদের প্রধান বাহন৷

মেঘনার চরগুলোতে বিভিন্ন সবজির প্রচুর চাষ হয়৷ কৃষকরা তাই তাদের চাষ করা সবজি বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসেন এ হাটে৷ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররাও আসেন এ বাজারে সবজি কিনতে৷ মেঘনার চরে চাষাবাদ হওয়া সবজির বিশাল সমাগম ঘটে এ হাটে৷

শীতে ভিন্ন রূপ নেয় বাইশমৌজা বাজার৷ এ সময় এ বাজারের প্রধান পণ্য টমেটো৷ পুরো বাজার এ সময়ে লাল রং ধারণ করে৷

বাইশমৌজায় বসে বৃহৎ পশুর হাটও৷ এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় পশুর হাট এটি৷ বাইশমৌজার পশুরহাটটি বসে শুধুই মঙ্গলবার৷ দূরদূরান্ত থেকে নৌকাযোগে এ হাটে পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন বিক্রেতারা৷

বাইশমৌজা হাটে মাছ ধরার সরঞ্জামও বিক্রি হয় প্রচুর৷ মেঘনা তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার জেলে সম্প্রদায় জাল কিনতে আসেন এ হাটে৷ হারাতে বসা গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রীর পসরা বসে বাইশমৌজায়৷ বাঁশ ও বেতের তৈরি ঝুড়ি, কুলা, ডুলা, ডালা, হাতপাখা, চালুনি নানান সামগ্রী পাওয়া যায় এ হাটে৷

হাটের দিনগুলোতে বাইশমৌজায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মিঠাই-মুড়কি নিয়ে আসেন বিক্রেতারা৷ হাটের আগের রাত থেকেই বাজারে বসে তারা বানাতে শুরু করেন নানান রকম মিষ্টান্ন৷ সব বিক্রি করেই পরের দিন আবার ফিরে যান তারা৷

বাইশমৌজা হাটে এখনো গ্রাম্য ডাক্তার-কবিরাজদের দেখা যায়৷ দাঁতের ডাক্তার, হোমিও, অ্যালোপ্যাথি, কবিরাজি সবরকম গ্রাম্য ডাক্তারই দেখা যায় এ হাটে৷

প্রাচীন এই হাটে পাওয়া যায়না এমন কিছু নেই৷ ধান, চাল, পোষা পাখি, হাঁস মুরগী, মসলা, শুঁটকি, পাট, ছোট খাট ইলেক্ট্রনিক্স, কৃষি সামগ্রী, বীজ ইত্যাদি সবধরণের পণ্য বিকিকিনি হয় এ হাটে৷

 

টাইমস/এএস

Share this news on: