শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভাইরাল সেই প্রতিবেদনের ব্যাপারে নতুন তথ্য

২০২১ সালের একটি প্রতিবেদন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলো। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় প্রকাশিত ‘অল আর প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ নামক ওই প্রতিবেদনটি ব্যাপক ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়।

সেই প্রতিবেদন নিয়ে এলো নতুন তথ্য। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, প্রতিবেদনে প্রকাশিত নিজের কুকীর্তি আড়াল করতে শেখ হাসিনার সকল প্রচেষ্টার ব্যাপারে। এমনকি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আজ জাজিরার নামে মামলারও। মামলা করতে প্রখ্যাত ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ডেসমোন্ড ব্রাউনি কেসির সঙ্গে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগাযোগ করেছিল লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।

৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার বাসভবন থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে এ সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে সানডে টাইমস। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে ব্যারিস্টার ব্রাউনি এ ব্যাপারে সহায়তা করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে সম্মতিও জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ক্লার্ক উইলিয়ামস নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে হাসিনার প্রতিনিধিদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। উইলিয়ামস যুক্তরাজ্যে ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দেন।

পরবর্তীতে অজানা কারণে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা থেকে সরে আসেন শেখ হাসিনা সরকার। তবে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে ফেলতে ফেসবুক এবং ইউটিউবের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন তারা। কিন্তু ইউটিউব ফেসবুক কেউই এতে কর্ণপাত করেনি। যার ফলে বাংলাদেশের হাইকোর্ট এই প্রতিবেদন সরাতে শেখ হাসিনার পক্ষে রায় দিলেও এটি ঠিকই থেকে যায় ফেসবুক ইউটিউবে।

যদিও বাংলাদেশের হাইকোর্ট এই প্রতিবেদন সরাতে হাসিনার পক্ষে রায় দিয়েছিল, তা সত্ত্বেও ভিডিওটি রয়ে যায়।

২০২১ সালে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, তার পরিবার ও অন্যান্যদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। ‘অল আর প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ নামের ওই ভিডিও প্রতিবেদনে ওঠে আসে কীভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বিকে অপহরণ এবং অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন তারা। শেখ হাসিনার আস্কারায় কীভাবে দুর্নীতি হচ্ছিল প্রতিবেদনে সেটি তুলে ধরা হয়েছিল।

প্রতিবেদনটি ইউটিউবে ১ কোটিরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। অপরদিকে প্রতিবেদনের জেরে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং তার ভাইদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। ওই সময় বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেদনটিকে ‘মিথ্যা, মানহানিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করেছিল।

এছাড়া এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তথ্য ফাঁসকরা হুইসেলব্লোয়ার জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। যারা প্রতিবেদনে সহায়তা করেছিলেন তাদের অনেকে ভয়ে দেশ ছাড়তেও বাধ্য হন।

রাষ্ট্রীয় এই দুর্নীতি ও কুকীর্তি ফাঁসের পর এটি লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, আলজাজিরার বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে মামলা করতে প্রখ্যাত ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ডেসমোন্ড ব্রাউনি কেসির সঙ্গে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগাযোগ করেছিল লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুথানের পর শেখ হাসিনার বাড়ি থেকে এ সংক্রান্ত একটি নথি পেয়েছে তারা। এতে উল্লেখ আছে, ব্যারিস্টার ব্রাউনি এ ব্যাপারে সহায়তা করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে সম্মতি জানিয়েছেন।

ব্যারিস্টার ব্রাউনি পরবর্তীতে ক্লার্ক উইলিয়ামস নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে হাসিনার প্রতিনিধিদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। যিনি যুক্তরাজ্যে ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে মামলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

সানডে টাইমস বলেছে, শেখ হাসিনার বাড়ি থেকে পাওয়া নথিতে উল্লেখ আছে, তার সরকার আলজাজিরার পাশাপাশি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বার্গম্যান প্রতিবেদনটি তৈরীতে সহায়তা করেছিলেন।

নথিতে আরও পাওয়া গেছে, বার্গম্যানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা একাধিক মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। এবং একটা সময় তাকে আটক করার পরিকল্পনাও করেন তারা।
সানডে টাইমস আরও জানিয়েছে, হাসিনার প্রতিনিধিরা আইনজীবী ক্লার্ক-উইলিয়ামসের কাছে দাবি করেন, প্রতিবেদনে অনেক অপূর্ণ তথ্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও এটি হাসিনার মানসম্মানকে ক্ষুন্ন করেছে। ওই সময় আলজাজিরা ও বার্গম্যানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা নিয়ে আলোচনা হয় তাদের। মামলাটি জেনারেল আজিজ, নাকি বাংলাদেশ সরকার করবে সেটি নিয়েও কথাবার্তা হয়। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কোনো সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে মানহানির মামলা করানোর ব্যাপারেও কথ হয় তাদের।

তবে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করতে চাইলেও শেখ হাসিনা সরকার এটি আর করেনি। এর বদলে ইউটিউব ও ফেসবুককে ভিডিও প্রতিবেদনটি সরিয়ে নিতে চাপ দিতে থাকে তারা। কিন্তু ইউটিউব ফেসবুক কেউই এতে কর্ণপাত করেনি। যদিও বাংলাদেশের হাইকোর্ট এই প্রতিবেদন সরাতে হাসিনার পক্ষে রায় দিয়েছিল, তা সত্ত্বেও ভিডিওটি রয়ে যায়।

টিএ/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা : ফাঁসির ৯ জনসহ সব আসামি খালাস Feb 05, 2025
img
গাজীপুরে পিকআপ ভ্যান খাদে পড়ে নিহত ৩ Feb 05, 2025
img
কোটা ইস্যুতে আবারো শিক্ষার্থীদের বিজয়, জাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল Feb 05, 2025
img
গাজা উপত্যকা দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র : ট্রাম্প Feb 05, 2025
চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট নিয়ে যে তথ্য জানা গেলো Feb 04, 2025
শিবির সন্দেহে নির্যাতনের অভিযোগে শাস্তি পেলো ১৩ ছাত্রলীগ কর্মী Feb 04, 2025
কানাডা-মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ করেও কেন স্থগিত করলেন ট্রাম্প? Feb 04, 2025
img
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ Feb 04, 2025
img
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের কি সুখবর দিচ্ছে আরব আমিরাত? Feb 04, 2025
img
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কানাডার সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা Feb 04, 2025