শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বাতিল হলো আরো এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোটা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা উঠিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। এমন সিদ্ধান্ত আসে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২ টার দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ঘোষণা করেন, পোষ্য কোটা বাতিল হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, বছরপ্রতি নির্ধারিত ১৮৮০ আসনের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান, ভাই-বোনরা পোষ্য কোটার আওতায় ভর্তির সুযোগ পেতেন। ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম নম্বর পেয়ে পাস করলেই তারা পছন্দমতো বিভাগে ভর্তি হতে পারেন। পোষ্য কোটায় গত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৫৬ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫৪ জন ভর্তি হন।
এই কোটা বাতিল করিয়ে আবারো আন্দোলনের মুখে নিজেদের কাঙ্খিত দাবি আদায় করে নিলো শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বৈষম্যকে উশকে দেয়। এই পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান আন্দোলনরতরা। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনে বসেন।
যার প্রেক্ষিতে ৩ ফেব্রুয়ারি পোষ্য কোটা একেবারে বাতিল না করে, কিছু পরিবর্তন আনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগে এই পোষ্য কোটার সংখ্যা ছিল অনির্ধারিত, পরে সেটিকে বদলে ৪০টি আসনে নির্ধারন করা হয় এবং বেধে দেওয়া হয় ভর্তির সুযোগ পাওয়ার ন্যুনতম নম্বরের অংক। উল্লেখ করা হয় একজন ব্যক্তি একবারের জন্য এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
এই পরিবর্তনের ঘোষণা মেনে নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা, কিন্তু বাধ সাধেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তারা নতুন করে বিক্ষোভ শুরু করেন পোষ্য কোটা আগের পদ্ধতিতে বহালের দাবিতে। ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। ‘পোষ্য কোটা বাতিল করো’ লেখাসংবলিত শিক্ষার্থীদের পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদান জানান শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
নতুন পোষ্য কোটার সংস্কার শিক্ষার্থীরা এর আগে মেনে নিলেও, ক্ষোভের মুখে পুরোপুরি বাতিলের দাবি তোলেন তারা। ৪ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটার দিকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যকে সিদ্ধান্ত নিতে চার ঘণ্টা সময় বেধে দেন।
পরে রাত প্রায় ১২ টায় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য জানান বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভায় পোষ্য কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যে সুবিধা রয়েছে সেটা বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে এই পোষ্য কোটা। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিশেষ কোটা নিয়ে সংস্কারের দাবি উঠছে। এবং সেসব জায়গাতেও শিক্ষার্থীরা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মুখোমুখি অবস্থানে।
টিএ/