বিগত সরকার আমলে অন্যতম সমালোচিত বিষয় ছিলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। আওয়ামী সরকারের পতনও ঘটেছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পথ ধরেই। এবার আওয়ামীলীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সাত বিশ্ববিদ্যালয় দখলের। বেসরকারি অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় দখলের পর ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে সেখানে বসানো হয় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের। এমন অভিযোগ চাওর হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
আচার্যের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়। পুরোনো ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা’ ও ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে সরকারিভাবে দখলে নেতৃত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সরিয়ে বসানো হয় বেক্সিমকো, আবুল খায়ের, কনকর্ড সহ আরো কিছু গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির হর্তাকর্তাদের।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের প্রতিষ্ঠিত অতিশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। কিন্ত তাকে কোনঠাসা করে ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় ঢোকেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। সর্বশেষ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার। অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে সম্প্রতি তাঁর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ হয়েছে।
২০১২ সালে রাজশাহীতে যাত্রা শুরু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের। রানার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করলেও পরে ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডে আট আওয়ামী লীগের নেতা ও অনুসারী ঢোকেন। এটিকে কাজে লাগিয়ে তারা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী। সর্বনিম্ন ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সেশন ফি ৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। এই হিসাবে বার্ষিক আয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এভাবে এক যুগে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয়ের সিংহভাগেরই কোনো হদিস নেই।
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, হাসিনা সরকার ২০২০ সালের ২ জুন সন্ত্রাসী দিয়ে তার এই ইউনিভার্সিটি দখল নেয়। এর পর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ বোর্ড অব ট্রাস্টিদের বাদ দিয়ে গঠন করেন দলীয় ‘কমিটি’।
জামায়াত সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগে দখল হয় দুই বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীর আশুলিয়ার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে সেখানে বসেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও এই একই অভিযোগে ২০২১ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান আ ন ম শামসুল ইসলামসহ ট্রাস্টি বোর্ডের ১২ সদস্যকে সরিয়ে দখলে নেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৫ সাল থেকে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী পরিবারের দখলি সম্পদে পরিণত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়।
টিএ/