ঢাকা-দিল্লি তলব-পাল্টা তলব, মাস্কটে বৈঠকে বসছেন তৌহিদ-জয়শঙ্কর

হাসিনা বিতর্কে যেন ক্রমশই খেই হারাচ্ছে ঢাকা-দিল্লি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দুই দেশের পররাষ্ট্র দূতদের তলব-পাল্টা তলবে দুর্বল হচ্ছে কূটনৈতিক সম্পর্কও। সীমান্ত উত্তেজনা কিছুটা শিথিল হয়ে এলেও ফের সে আগুনে ঘি ঢেলেছেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি অনলাইনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অধিবেশনে যোগ দিয়ে ফের পড়েছেন জনতোপের মুখে।

শেখ হাসিনার নানা উস্কানিমূলক কথায় ক্ষোভ জানিয়ে দেশজুড়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে উত্তেজিত ছাত্র জনতা। বাদ যায়নি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িটিও। শেখ হাসিনার ভাষণের সমান্তরালে বুল্ডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বাড়িটি।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। বেশকিছুদিন তার কোনো হদিস না মিললেও সম্প্রতি ফের সরব হয়েছেন তিনি। ভারতের গোপন ঠিকানা থেকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য ও দলের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

গেল ৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৮০তম দিনে ফের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে সাধারণ জনগণ। শেখ হাসিনা ভারতে বসে বারবার বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ আনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জুলাই গণঅভ্যত্থানে হামলা, গুম ও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে দেশত্যাগের পর থেকেই শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন বিক্ষুব্ধরা। একাধিক মামলার প্রধান আসামি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দিতে দিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠিও পাঠিয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তবে তাতে কোনো কর্ণপাত করেনি মোদী সরকার। বহাল তবিয়তে পূর্ণ নিরাপত্তায় দিল্লিতে রাজ অতিথি হয়ে আছেন শেখ হাসিনা।

ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্যের ঘটনায় ভারতকেও দায় নিতে হবে বলে জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে দিল্লি মুখপাত্রের দাবি, শেখ হাসিনার বক্তব্য একান্তই তার ব্যক্তিগত, এতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। এ বিষয়ে ঢাকা ও দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের দূতদের তলব-পাল্টা তলবের মুখে পড়তে হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেছেন, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ক্ষতিকর এবং এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত।

সে প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ভারতকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছে শেখ হাসিনাকে সংযত করতে। তার বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলেও উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে আগামী সপ্তাহে ওমানের রাজধানী মাস্কটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্সের সাইডলাইনে এ বৈঠক হবে বলে নিশ্চত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কূটনৈতিক সূত্রমতে, এই বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। গুরুত্ব পাবে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তন পরবর্তী জটিলতাগুলো। তুলে ধরা হবে কূটনৈতিক অস্বস্তি। বৈঠকে ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য সীমিত করার আহ্বান জানানো হবে এবং প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত আনার বিষয়েও আলোচনা হবে। সবচেয়ে বড় কথা, শেখ হাসিনা ইস্যু সমাধানে বৈঠকে দিল্লিকে চাপ দেবে ঢাকা। জানা যায়, হাসিনাকে থামাতে এস জয়শঙ্করকে কঠোর বার্তা দেবেন উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

ভারতে বসে শেখ হাসিনা যেন কোনও বক্তব্য না দেন এবং দেশকে অস্থিতিশীল না করেন সে বিষয়ে দিল্লিকে আহ্বান জানাবেন তিনি। গেল ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের পর দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হলেও, জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আবার উত্তেজনা তৈরি হয়। বিশেষ করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং সীমান্তে সংঘর্ষ নিয়ে সহিংসতায় জড়ায় দুই দেশ।

টিএ/

Share this news on: