অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে রহস্যময় ফেনা

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে রহস্যজনক এক ধরনের ফেনা ভেসে আসার ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় শতাধিক সার্ফারের অসুস্থ হয়ে পড়ার পাশাপাশি বহু মাছ, অক্টোপাস ও পাতাযুক্ত সিড্রাগন মারা গেছে বলে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে।
অজ্ঞাত এই ফেনার কারণে ওয়াইটপিঙ্গা বিচ ও পারসন্স বিচ এলাকায় ১০০ জনেরও বেশি সার্ফার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সৈকতে বিপুল পরিমাণে মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

সপ্তাহান্তে প্রথমবারের মতো এই হলুদ, বিবর্ণ, কাদাযুক্ত, চকচকে ফেনা ওয়াইটপিঙ্গা সৈকতে দেখা যায়, যা অ্যাডিলেড শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও ভিক্টর হারবার থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। সৈকতে ঘুরতে আসা মানুষ ও সার্ফাররা সমুদ্রে যাওয়ার পর ফ্লুর মতো উপসর্গ অনুভব করেন, যার মধ্যে ছিল চোখ চুলকানো, শুকনা কাশি ও গলায় ব্যথা।

অনেকে দৃষ্টির সমস্যার কথাও বলেছেন জানিয়ে স্থানীয় সার্ফার অ্যান্থনি রোল্যান্ড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পানিতে অস্বাভাবিক কিছু আছে।’ তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘পানির ওপরে ঘন, ভারী হলুদ ফেনা ছড়িয়ে ছিল, আর সৈকতের ধারে সবুজ ও কাদা মিশ্রিত স্তর দেখা যাচ্ছিল।’

কিছু পর্যটক সমুদ্রে এক ধরনের তৈলাক্ত স্তর ভাসতে দেখেছেন এবং সৈকতে প্রচুর মৃত মাছ ও পাতাযুক্ত সিড্রাগন পড়ে থাকতে দেখেছেন। রোল্যান্ড তার অনলাইনে পোস্ট করা ছবিতে মৃত সামুদ্রিক প্রাণী দেখিয়ে লিখেছেন, ‘চোখে দেখা প্রমাণ, পানিতে অস্বাভাবিক কিছু একটা আছে।’

রোল্যান্ডের পোস্টের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তিনি জানান, তিনি ও তার সহকর্মীরাসহ ১০০ জনেরও বেশি মানুষ এই অস্বাভাবিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছে।

তিনি আশঙ্কা করছেন, এটি ফ্লোরিও উপদ্বীপের অন্যান্য সৈকতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

একজন মন্তব্যকারী জানান, ‘গলার ভেতরে কিছু আটকে থাকার মতো অনুভূতি হচ্ছিল’ এবং পোর্ট এলিয়ট বোলস ক্লাবে থাকার সময় তিনি কাশতে শুরু করেন। অন্য একজন বলেন, ‘আমার চোখ খুব খারাপভাবে জ্বালা করছিল’। তার সন্দেহ, এই ফেনা ওয়াইটপিঙ্গার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে।

রোল্যান্ড আরো দাবি করেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মিডলটন, এনকাউন্টার বে ও ভিক্টর হারবারে মৃত মাছ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই ভিক্টর উপকূলে পৌঁছে গেছে এবং মিডলটনে মৃত অক্টোপাসও পাওয়া গেছে।’

একজন স্থানীয় বাসিন্দা ধারণা করছেন, এই রহস্যজনক ফেনা হয়তো নীল-সবুজ শৈবাল (ব্লু/গ্রিন অ্যালগি) বা সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে এসেছে, যা মানুষ ও প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক। সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে এলে ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে অতিরিক্ত ক্লান্তি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট অন্যতম।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উচ্চ তাপমাত্রা, স্থির পানি ও চলমান সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট মাইক্রো-অ্যালগাল ব্লুম এই ফেনার কারণ হতে পারে। তারা ওয়াইটপিঙ্গা ও পারসন্স বিচ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে পরিবেশ ও পানি সংরক্ষণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় নিউল্যান্ড হেড কনজারভেশন পার্কের ওয়াইটপিঙ্গা ও পারসন্স বিচ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে।

এদিকে প্রাথমিক শিল্প ও অঞ্চল বিভাগ জানিয়েছে, ওয়াইটপিঙ্গায় মাছের মৃত্যুসংক্রান্ত একটি সম্ভাব্য ঘটনা তদন্তাধীন। একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সৈকত যত দ্রুত সম্ভব আবার খুলে দেওয়া হবে।’

সূত্র : এনডিটিভি

আরএইচ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ