বিমানের ৪৫ হাজার টিকিট হরিলুট

সর্ষের ভেতর ভুত-এর মতো কাণ্ড ঘটিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪৫ হাজার টিকিট হরিলুট হয়েছে। ১০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এই হরিলুট হয়।

হরিলুট হওয়া টিকিটের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটও রয়েছে। এসব টিকিট কোনটি শতভাগ কমিশনে নেয়া আবার কোনটি ৯০ ভাগ কমিশনে। ফলে বিমান প্রতি বছরই লোকসানের বিত্তের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপিত কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। রোববার সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত কার্য বিবরণী উপস্থাপন করা হয়।

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটি সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মো. আসলামুল হক, তানভীর ইমাম, আনোয়ার হোসেন খান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে উত্থাপিত কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব টিকিট আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে হরিলুট হয়েছে। বিমানের অর্থ পরিদপ্তর, উচ্চ পদস্থ থেকে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা সবাই এ সুবিধা নিয়েছেন।

প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সাপোর্ট পরিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ নামের পাশাপাশি স্ত্রী-পরিজনদের নামেও নিয়েছেন একাধিক টিকিট। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১০ বছরে নিয়েছেন ৪৬ টিকিট।

একইভাবে, প্রকিউরমেন্ট এবং লজিস্টিক শাখার উপ-ব্যবস্থাপকও কম নেননি। তিনি এবং তার পরিবারের নামে নিয়েছেন ১১ টি টিকিট। আর ওই বিভাগের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মো সরোয়ার হোসেন নিয়েছেন ১৩ টি টিকিট।

সিনিয়র সাইন রাইটার মোহাম্মদ মহসীন নিয়েছেন ২২টি টিকিট। তিনি নিজে এবং তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছেন এ তালিকায়। সব টিকিট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য নেয়া। সহ-ব্যবস্থাপক (প্রকিউরমেন্ট) স্বপন কুমার দে তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে নিজে এবং পরিবার-পরিজনের নামে কমিশনে টিকিট নিয়েছেন ৬৮টি।

সহব্যবস্থাপক মো. নুরুজ্জামান ১২ টি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোকসানা আক্তার ১৮ টি, প্রশাসনিক সহকারী দিলরুবা আফরোজা নিজ, স্বামী, ছেলে-মেয়ে এবং পিতা-মাতার নামে নিয়েছেন ২৬ টি ওয়ানওয়ে টিকিট। আবুল হাসেম ১৭ টি, একেএম শাহফুজুর রহমান ১৪ টি, মানিকুর রহমান ২ টি, লামিয়া শারমিন একাই নিয়েছেন ৫০ টি।

নিজাম উদ্দিন ৮ টি, ফকির আবদুল হালিম ৮ টি, আবদুল খালেক ১৪ টি, আলমগীর কবির ১৮ টি, আবু তালেব ১৭ টি, গোলাম রসুল ১ টি, ইষ্টার হালদার ২২ টি, সাইফ উদ্দিন ১৬ টি, আবদুর রশীফ ১৩ টি, ফরহাদুর রেজা ১৮ টি, মাছুদুল আলম খান ৬ টি, শরীফুল ইসলাম ১৩ টি, শরিফ হাসান ১৩ টি।

হাবিবা মির্জা ২০ টি, নেছার আলী গাজী ৪৬ টি, জাহাঙ্গীর আলম তোকদার ২০ টি, রবিউল ইসলাম ২০ টি, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ৪ টি এবং মতিউর রহমান ৪ টি। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই প্রকিউরমেন্ট ও লজিস্টিক পরিদপ্তরের কর্মরত ছিলেন।

প্রশাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ নিয়েছেন একাই ২৯ টি টিকিট, কেউ ২০ টি, কেউ ১৮ টি। এর মধ্যে মো আল মাসুদ খান ও কামাল হোসেন ১৮ টি করে টিকিটি নিয়েছেন। ফখরুল আলম চৌধুরী নিয়েছেন ২৯ টি।

আন্তর্জাতিক পরিভ্রমণে এ জেড এম আরিফ সহকারি ব্যবস্থাপক ও সংগঠন ও পদ্ধতি এ কর্মকর্তা ভারত সফরে ২০১২ ও ১৪ সালেই ২টি টিকিট নিয়েছেন। আইটি ডিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোস্তাক হোসেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রুটে নিজ পরিবারের নামে ৩৩ টি টিকিট নিয়েছেন।

আর আরিফুল হাসান সাধন (সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট) নিয়েছেন ৮৭ টি টিকিট। তার পুরো পরিবার ১০ বছর ধরে দেশের ভিতরে বিমানে ছাড়া অন্যকোনো যানবাহন ব্যবহার করেনি। নার্গিস আক্তার নিয়েছেন ৪৩টি টিকিট।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, কে কিভাবে টিকিট নিয়েছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। কি হয়েছে সেটাও আমরা বলতে পারব না। আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: