বিপ্লবী ও নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। ইতিহাস কথা বলে, বলে দেশ, জাতি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথা। যারা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। তারা হয়ত মরে গেছে। কিন্তু ইতিহাস তাদের স্থান দিয়ে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই ইতিহাসের অংশ হয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত নাট্যকার ও সাংবাদিক। তিনি ১৮৯২ সালে (১২৯৯ বঙ্গাব্দের ৪ শ্রাবণ) খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। বিপ্লবী সংগঠন স্বদেশী ও অনুশীলন সমিতির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের পিতা ছিলেন সত্যচরণ সেন গুপ্ত। শচীন্দ্রনাথের প্রাথমিক জীবন কাটে পিতার কর্মস্থল রংপুরে। সেখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। সেখানে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ছিলেন তার সহপাঠী। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়ে শচীন্দ্রনাথ বিদ্যালয় ত্যাগ করেন এবং অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জাতীয় বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাস করে তিনি বিএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরে তিনি কটক মেডিক্যাল স্কুলে চিকিৎসাবিদ্যা ও ময়মনসিংহে কবিরাজি শেখেন। তিনি ছোট থেকেই ছিলেন দেশপ্রেমে জাগ্রত এক কিশোর।

কর্মজীবনের শুরুতে শচীন্দ্রনাথ কিছুদিন একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন; পরে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। তার সাংবাদিক জীবনের শুরু দৈনিক কৃষক ও ভারত পত্রিকায় সহ-সম্পাদক রূপে। এছাড়া তিনি সাপ্তাহিক হিতবাদী, বিজলী ( বারীন্দ্রকুমার ঘোষ প্রতিষ্ঠিত), আত্মশক্তি প্রভৃতি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন।

শচীন্দ্রনাথ বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন নাটক রচনায়। তার রচিত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকের মূল প্রতিপাদ্য দেশাত্মবোধ। তার নাটকে ফুটে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও হিন্দু-মুসলমানের মিলনের বাণী।

তার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটকগুলি হলো: গৈরিক পতাকা (১৯৩০), দেশের দাবি (১৯৩৪), রাষ্ট্রবিপ্লব (১৯৪৪), সিরাজুদ্দৌলা (১৯৩৮), ধাত্রীপান্না (১৯৪৮), সবার উপরে মানুষ সত্য (১৯৫৭), আর্তনাদ ও জয়নাদ (১৯৬১)। এছাড়াও রক্তকমল (১৯২৯), ঝড়ের রাতে (১৯৩১), নার্সিংহোম (১৯৩৩), স্বামী-স্ত্রী (১৯৩৭), তটিনীর বিচার (১৯৩৯), মাটির মায়া, কাঁটা ও কমল, প্রলয়, জননী প্রভৃতি তার সামাজিক নাটক। তিনি অনুবাদ গ্রন্থও রচনা করেছিলেন।

বেসরকারি সাংস্কৃতিক দলের নেতা হিসেবে তিনি রাশিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, চীন, সিংহল প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৬১ সালের ৫ মার্চ শচীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন।

 

টাইমস/এসআর/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইচ্ছে করেই ফুটবল নিয়ে স্লেজিং করেছি: আসিফ আকবর Nov 21, 2025
img
রজনীকান্তের নতুন সিনেমা 'থালাইভার ১৭৩' পরিচালনায় ধানুশ! Nov 21, 2025
img
এক সিনেমার জন্য প্রিয়াঙ্কার পারিশ্রমিক ৩০ কোটি! Nov 21, 2025
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাবনায় ইউক্রেনের জন্য কড়া শর্তাবলী Nov 21, 2025
সাড়ে তিন হাজার বছর পুরোনো নগরীর সন্ধান কাজাখস্তানে Nov 21, 2025
কিসের সন্ধানে আরব সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে পাকিস্তান Nov 21, 2025
ভিসার সময় বাড়ানোয় ঝুঁকিতে ৫০ হাজার নার্স Nov 21, 2025
বন্ধ কূপে মিলল গ্যাস, উঠবে ২০ বিলিয়ন ঘনফুট Nov 21, 2025
নিউমুরিং টার্মিনাল চুক্তি স্থগিতের আদেশ হাইকোর্টের Nov 21, 2025
মানবিকতার নজির স্থাপন করলেন ঢাকাই নায়িকা বুবলী Nov 21, 2025
নেটিজেনদের উচ্ছ্বাস, জন্মদিনের একান্ত মুহূর্তে তারা-বীর Nov 21, 2025
‘জাব তাক হ্যায় জান’-এর ছায়ায় শাকিবের নতুন সিনেমা! Nov 21, 2025
img
ওমানের জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের শুভেচ্ছা Nov 21, 2025
img
মির্জা আব্বাসের আসনে লড়বেন আলোচিত সেই রিকশাচালক সুজন Nov 21, 2025
img
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া Nov 21, 2025
img
জামায়াতের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আজহারির মন্তব্য Nov 21, 2025
img
ব্রাজিলে কপ ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড Nov 21, 2025
img
বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে কারাগারে প্রেরণ Nov 21, 2025
img
বাংলাদেশের 'মন তরঙ্গ' এবার বিশ্ব মঞ্চে Nov 20, 2025
img
ইতালি যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জের ২ যুবকের মৃত্যু Nov 20, 2025