কুমির ধরার টোপ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা

পশ্চিমবঙ্গের লেখক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘টোপ’ গল্পে এক জোড়া জুতা পাঠিয়েছিলেন রাজাবাহাদুর এন আর চৌধুরী। তার নিজের শিকার করা বাঘের চামড়ায় তৈরি। লিখেছিলেন, ‘চমৎকার ঝকঝকে বাঘের চামড়ার নতুন চটি। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, পায়ে দিতে লজ্জা বোধ হয় দস্তুরমতো। ইচ্ছে করে বিছানায় শুইয়ে রাখি।’

গল্পের শেষে জানা যায়, ‘কিপারের বেওয়ারিশ ছেলেকে’ শিকারের টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রাজা। এ ক্ষেত্রেও তা-ই। শুধু কোনও গল্প-কাহিনি নয়। ঘোর বাস্তব। এক সময়ে আমেরিকা ও ইউরোপে কুমির শিকারের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হত আফ্রিকান শিশুদের। সম্প্রতি এই খবর প্রকাশিত হয়েছে আফ্রিকার একটি পত্রিকায়।

বলা হত ‘গেটর বেট’। জল থেকে শিকারকে ডাঙায় তুলতে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হত আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের। আমেরিকার লুইজিয়ানা, ফ্লোরিডায় বেশ প্রচলিত ছিল এই প্রথা।

আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উনিশ শতকে কুমিরের গায়ের চামড়া দিয়ে তৈরি জ্যাকেট, জুতা, বেল্টের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু কুমির শিকার করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে যেত। কেউ হাত খুইয়েছেন তো কেউ পা। অগভীর জলাভূমিতে নেমে কুমির শিকার করতে গিয়ে মারাও গেছেন অনেকে। তাই কুমির শিকারের সহজ পন্থা জলার পাশে ফাঁদ পেতে আড়াল থেকে গুলি করা। হাঁস-মুরগি-খরগোশ, ছাগলের বাচ্চা, টোপ হিসেবে সবই দামি। আফ্রিকা থেকে আনা কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের শিশুসন্তানকে টোপ হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হত। কখনও কখনও ক্ষতিবিক্ষত করে। কারণ রক্তের গন্ধে দ্রুত আকৃষ্ট হয় ‘শিকার’।

মানুষের এই নৃশংসতা অস্বীকার করা হয়েছে বহুবার। কিন্তু একাধিক বার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এমনই খবর উঠে এসেছে।

১৯২৩ সালে মার্কিন এক পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, ‘জলার ধারে বাচ্চাদের ছেড়ে দেওয়া হত। বন্দুকবাজ শিকারের অপেক্ষায় লুকিয়ে থাকত আশপাশে। কুমির এগোলেই গর্জন করে উঠত বন্দুক।’ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ‘ভুয়া সংবাদ’। কিন্তু মার্কিন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিল খবরটি। ফলে এটা মেনে নেওয়া হয়, শ্বেতাঙ্গ মার্কিনিদের কাছে এ খবর বিশ্বাসযোগ্য লেগেছে।

জিম ক্রো মিউজিয়ামে একটি ছবি মিলেছিল। ছবিটি ফ্লোরিডার এক বাসিন্দার তোলা। তিনি নিজের বাড়ির দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিলেন। ছবিতে ন’টি নগ্ন আফ্রিকান শিশু। তলায় লেখা ‘অ্যালিগেটর বেট’।

১৯০৮ সালের ৩ জুন একটি প্রথম সারির মার্কিন দৈনিকে খবর হয়েছিল— ‘নিউইয়র্ক চিড়িয়াখানার এক কর্মী দু’টি কৃষ্ণাঙ্গ শিশুকে কুমিরের খাঁচায় টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা লোকেদের কুমির দেখাতে প্রাণীগুলোকে শীতকালীন ট্যাঙ্ক থেকে গরমকালে থাকার বিশেষ ট্যাঙ্কে সরানোর দরকার হয়ে পড়েছিল। আর কোনো উপায় খুঁজে পায়নি কেউ। কুমিরের খাঁচায় বাচ্চা দু’টিকে টোপ হিসেবে ঢোকানো হয়েছিল।’

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ পরে সাফাই দিয়েছিলেন, বিজ্ঞাপন দেখে ওই বাচ্চা দুটির মায়েরা নিজেরাই এসেছিলেন তাদের কাছে। দুই ডলার করে দেওয়া হয়েছিল নারীদের। তাছাড়া, বাচ্চা দুটির কোনও ক্ষতিও হয়নি। যদিও পরের প্রশ্নটাই উঠেছিল, সেই সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা লিখতে-পড়তে পারতেন না। তারা বিজ্ঞাপন দেখলেন কীভাবে! আজ অবধি এ প্রশ্নের উত্তর দেয়নি প্রশাসন।

 

 

টাইমস/এসআই

 

 

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কনসার্টে গায়কের সঙ্গে নাচল রোবট Dec 21, 2025
img
মোদির বায়োপিকের শুটিং শুরু Dec 21, 2025
img
ঝালকাঠি পৌরসভার সাবেক মেয়র গ্রেপ্তার Dec 21, 2025
img
তাসকিন-শানাকাকে পেছনে ফেলে ঢাকার নেতৃত্বে মিঠুন Dec 21, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে এলো ২১৭ কোটি ডলার Dec 21, 2025
img
রিশাদের মিতব্যয়ী বোলিংয়ে জিতল হোবার্ট Dec 21, 2025
img
আমাদের সকলকে এখন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : তারেক রহমান Dec 21, 2025
img

সিরাজ আলী খান

প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ ও সম্মানিত না হওয়া পর্যন্ত আমি বাংলাদেশে আর ফিরব না Dec 21, 2025
img
সৌদি আরবে এক সপ্তাহে প্রায় ১৮ হাজার অবৈধ প্রবাসী গ্রেপ্তার Dec 21, 2025
img

ওসমান হাদি হত্যা

আসামি পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে পুনরায় রিমান্ডে সিবিউন-সঞ্জয় Dec 21, 2025
img
নিলামের মাধ্যমে আরও ৬ কোটি ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক Dec 21, 2025
img
রংপুরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন জিএম কাদের Dec 21, 2025
img
প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ নারী ভলিবল দল Dec 21, 2025
img
রায় ঘোষণার পর নতুন বার্তা দিলেন ইমরান খান Dec 21, 2025
img
ছায়ানটে হামলায় কোয়েল ও চিরঞ্জিৎ এর প্রতিক্রিয়া! Dec 21, 2025
img
সোহেলের জন্মদিনে নজর কাড়লেন সালমান Dec 21, 2025
img
বিয়ের আট বছর পর বিচ্ছেদের কথায় মুখ খুললেন বিন্দু Dec 21, 2025
img

নাহিদ রানা

জাতীয় দলে ভালো করলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এমনিতেই সুযোগ আসবে Dec 21, 2025
img
মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই বাজিমাত ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ Dec 21, 2025
img
হাদির হত্যাকারী দেশের বাইরে চলে গেছে, এমন তথ্য নেই : পুলিশ Dec 21, 2025