জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করা ও সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর ভারতের অনেক রাজনীতিবিদ, আমলা, শিক্ষক, চিকিৎসক, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বসহ সুশীল সমাজের অনেকেই তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
কাশ্মীর ভারত সরকারের দমন-নিপীড়ন নীতির প্রতিবাদে এবার পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের (আইএএস) কর্মকর্তা কান্নান গোপীনাথ(৩৩)।
নরেন্দ্র মোদির সরকার ৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার পর এই প্রথম কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করে প্রতিবাদ জানালেন।
কেরালার বন্যার সময়ে ত্রাণকার্যে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দিয়ে 'নায়ক' উপাধি পেয়েছিলেন আইএএস কর্মকর্তা কান্নান জি। শনিবার তিনি পদত্যাগ করেন।
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পাঠানো এক পদত্যাগপত্রে কান্নান লিখেন, ‘আমি কান্নান জি ২০১২ ব্যাচের (এজিএমইউটি ক্যাডার) আইএএস কর্মকর্তা। ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিলাম। দয়া করে আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বাধিত করবেন।’
কান্নানের ঘনিষ্ঠদের দাবি, জম্মু-কাশ্মীরে সরকারি নীতির প্রতিবাদেই ইস্তফা দিয়েছেন কান্নান। ইতোমধ্যেই টুইটারে তাকে ‘দেশবিরোধী’ তকমা দিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে।
টুইট বার্তায় কান্নান বলেছেন, ‘ভেবেছিলাম সিভিল সার্ভিসে থেকে মানুষের বক্তব্য তুলে ধরতে পারব। দেখলাম আমার কণ্ঠই রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
দাদরা ও নগর হাভেলি প্রশাসনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন কান্নান। তার বক্তব্য, ‘আমি স্বরাষ্ট্রসচিব বা অর্থসচিব নই। আমার ইস্তফায় পরিস্থিতির বদল হবে না। কিন্তু আমার বিবেক স্বচ্ছ।’
তবে আইএএস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ায় কান্নান ক্ষুব্ধ। তার এক সহকর্মী জানান, ‘ও বলত মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার অর্থ জরুরি অবস্থা জারি হওয়া।’ প্রাক্তন আইএএস ও রাজনীতিক শাহ ফয়সলকে আটক করাতেও কান্নান ক্ষুব্ধ হন বলে দাবি তার সহকর্মীদের।
আনন্দবাজার জানায়, মোদি সরকারের সঙ্গে আগেও বিরোধ হয়েছে কান্নানের। লোকসভা ভোটের সময়ে এক নেতা তাকে নির্দেশ দেয়ায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কান্নান। তার বক্তব্য, ‘মোদি সরকার ক্ষমতায় ফেরার পরে তুচ্ছ কারণে আমাকে শো-কজ় নোটিস দেয়া হচ্ছিল।’
কান্নানকে ‘দেশ-বিরোধী’ তকমা দিয়ে টুইটারে প্রচার শুরু হয়েছে। তার বক্তব্য, ‘দেশের স্বার্থে আমি দেশবিরোধী তকমা সহ্য করতে রাজি।’ তবে কান্নানের পাশেও দাঁড়িয়েছেন অনেকে। প্রাক্তন আইএএস অনিল স্বরূপের বক্তব্য, ‘কান্নানের মতো অফিসারদের নিয়ে আমরা গর্বিত। কেন ইস্তফা তা জানা প্রয়োজন।’
জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করা ও সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর টানা ২০ দিন ধরে উপত্যকা অবরুদ্ধ। এই তিন সপ্তাহে রাজ্যের বাইরের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকে উপত্যকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। অনেককে গ্রেপ্তার করে রাজ্যের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অসমর্থিত খবর অনুযায়ী, ধৃত রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর সংখ্যা চারশ'র বেশি। কোনো দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে দেয়া হচ্ছে না। কয়েক লাখ আধা সেনানী সদা সজাগ। দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য কোনো কোনো মহল্লায় দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। স্কুল খুললেও পড়ুয়াদের সংখ্যা হাতে গোনা। উপত্যকার খবর বাইরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না, বাইরের খবর উপত্যকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। টেলিফোন কিছু কিছু চালু করা হলেও মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।
টাইমস/এসআই