গাছ ও পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে একের পর এক ইটভাটা

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুরে এবং মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ফসলি জমি ধ্বংস করে গড়ে উঠছে একের পর এক ইটভাটা। পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে এসব ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড় থেকে কেটে আনা গাছ। আর এই কাজটি রাতের আঁধারে করে যাচ্ছে একটি চোর চক্র। ফলে উজাড় হচ্ছে পাহাড়ি বনাঞ্চল ও মূল্যবান গাছ।

পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী। এই কারণে অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করছে কর্তৃপক্ষ। পাহাড় এবং ফসলি জমি কাটার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কর্ণপাত করছেন না কোনো ইটভাটার মালিক। মিরপুর বাজার সংলগ্ন এবং পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের ফসলি জমিতে নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। স্থানীয় প্রশাসনও এসব ব্যাপারে চুপ।

সম্পূর্ণ অবৈধভাবে লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। প্রশাসনকে বারবার এই বিষয়ে অবগত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিভিন্ন পাহাড়-ফসলি জমি থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বেশিরভাগ ইটের ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কম উচ্চতার টিনের ছিমনি। ইট ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

কয়লা দিয়ে এসব ইটভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও খরচ সাশ্রয়ের জন্য সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্ভয়ে প্রকাশ্যেই এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অনেকে গোপনে অবৈধভাবে শিশু গাছের কাঠ মজুদ করে চালিয়ে যাচ্ছে এ সমস্ত কার্যক্রম। এভাবে চলতে থাকলে দ্রুতই পার্শ্ববর্তী বনভূমি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

ফসলি জমি এবং পাহাড়ের মাটি লুকিয়ে এনে সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইট তৈরি হচ্ছে। অনেকেরই কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। ইটভাটার কাছাকাছি বাচ্চাদের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এসব ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। ইটভাটার কারণে ফসলের ফলনও কমে গেছে। প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীদের ভয়ে স্থানীয়রাও প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। ফলে ইটভাটার মালিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।

জেলা প্রশাসন থেকে ইট ভাটার অনিয়ম রোধে কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও কার্যত এ বিষয়ে লক্ষণীয় কোনো কাজই হচ্ছে না। সরকারি আইনে স্পষ্ট বলা আছে, কোনো আবাসিক এলাকায় ইটভাটা থাকতে পারবে না । আর শিশুদের বিদ্যালয়ের আশেপাশে তো প্রশ্নই ওঠে না। ইটভাটার ডিজাইন করতে হলে ১২০ ফুট চুল্লি থাকতে হবে। আর এই চুল্লি যদি ১২০ উচ্চতার না হয় তাহলে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড (এসপিম) নির্গত হয়ে বাচ্চাদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। যদি ওই এলাকায় গাছ-গাছালি থাকে তবে তা নষ্ট হয়ে যায়। আর ইটভাটার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- তা গাছপালার বৃদ্ধি একেবারেই নষ্ট করে দেয়। পাশাপাশি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়।

লেখক: হৃদয় দেবনাথ

সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী

মৌলভীবাজার

ইমেইল:hridoy.sri@gmail.com

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায় : মির্জা ফখরুল Dec 16, 2025
আপনার সময় কি খারাপ যাচ্ছে? Dec 16, 2025
img
সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা Dec 16, 2025
img
যিশু-সৌরভ প্রযোজিত প্রথম সিনেমায় বড় চমক! Dec 16, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে আ.লীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার Dec 16, 2025
img
৪০ মিনিট বিরতির পর মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক Dec 16, 2025
img
ক্যাটরিনার চেহারা বদলেছে, এবার ছেলের ছবি প্রকাশ্যে আনলেন ভিকি! Dec 16, 2025
img
শ্যামপুরে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারাল যুবক Dec 16, 2025
img
মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন Dec 16, 2025
img
মা-বাবাকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার নিক Dec 16, 2025
img
নির্বাচন থেকে সরে গেলেন বিএনপির প্রার্থী মাসুদ Dec 16, 2025
img
ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে পড়েছে ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টির’ রেপ্লিকা Dec 16, 2025
img
২য় বাংলাদেশি হিসেবে বিগ ব্যাশে রিশাদ হোসেনের অভিষেক Dec 16, 2025
img
বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা Dec 16, 2025
img
৪ প্রেম ও ২বিয়ের পর কনিকার নতুন উপলব্ধি! Dec 16, 2025
img
ছেলেকে নিয়ে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা বুবলীর Dec 16, 2025
img
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির আস্ফালনের মধ্যেই বিজয় দিবস, তবু মানুষ প্রস্তুত : প্রিন্স Dec 16, 2025
img
মিরপুরে নান্নুদের হেসেখেলে হারালেন আশরাফুলরা Dec 16, 2025
কোটিপতি হলেও সমুদ্র মিস করছেন অক্ষয় কুমার Dec 16, 2025
img
হাদির ওপর হামলা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সক্ষমতা নিয়ে এক ধরনের গণপরীক্ষা: জিল্লুর রহমান Dec 16, 2025