শিরোপার স্বপ্নপূরণ টাইগারদের

১৯৯৮ সালের ১৭ মে ভারতে কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল ওয়ানডেতে প্রথম জয়ের দেখা। ২১ বছর পর সেই দিনেই ঘুচল বড় আক্ষেপ। শেষ হলো প্রতীক্ষা। সেই অধরা স্বপ্নটা ধরা দিল বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার বাংলাদেশের পাশে লেখা হলো, ‘চ্যাম্পিয়ন’। আর এ কাব্যিক জয়ের দুই নায়ক সৌম্য সরকার আর মোসাদ্দেক হোসেন।

বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ফাইনাল ম্যাচ জয়ের জন্য ২৪ ওভারে ২১০ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। ওপেনার সৌম্য সরকারের ৬৬ ও মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেকের অপরাজিত ৫২ রানের সুবাদে ২২ দশমিক ৫ ওভারে ২১৩ রান তুলে ফাইনাল ম্যাচ জিতে নেয় টাইগাররা।

ওপেনার সৌম্য ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা এবং মোসাদ্দেক ২টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন।

ডাবলিনের মালাহাইডে শুক্রবার শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০.১ ওভারে ১৩১ রান করার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। সোয়া পাঁচ ঘণ্টা রোদ-মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির পর খেলা শুরু হলে ম্যাচ নেমে আসে ২৪ ওভারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১ উইকেটে ১৫২ রান। ডাকওয়ার্থ-লুইসে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১০। সৌম্য-মোসাদ্দেকরা জয় এনে দিয়েছেন ৭ বল বাকি থাকতে।

বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ম্যাচ ছিল পুরোটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজময়। শেই হোপ ও সুনিল আমব্রিসের দুর্দান্ত জুটিতে শুরুটা ছিল তাদের দাপুটে।

টানা তিন ম্যাচ হারের পর এ দিন টস ভাগ্যকে পক্ষে পান মাশরাফি বিন মুর্তজা। মেঘলা আকাশের নীচে, বৃষ্টির শঙ্কায় থাকা ম্যাচে নামেন বোলিংয়ে।

মাশরাফি নিজে ও সাইফ বোলিংয়ের শুরুটা করেছিলেন আঁটসাঁট। প্রথম ৫ ওভারে রান ছিল ১৫। বাউন্ডারি কেবল একটি। ষষ্ঠ ওভারে সাইফের বোলিংয়ে তিনটি বাউন্ডারি মেরে আমব্রিস ঝেরে ফেলেন জড়তা। ছুটতে থাকে দু'জনের রান রথ।

দু'জনের দারুণ ব্যাটিংয়ে যখন বাংলাদেশকে মনে হচ্ছিল অসহায়, তখনই বৃষ্টির হানা। খেলা বন্ধ থাকে লম্বা সময়।

বৃষ্টির পর যখন খেলা শুরু হয়, ডাকওয়ার্থ-লুইসে তখনই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল বড় কিছুর পথে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই বেছে নেয় নিরাপদ ব্যাটিংয়ের পথ। এর মাঝেও ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন ৬৪ বলে ৭৪ রান করা হোপ।

খেলা শুরুর পর বাকি ২৩ বলে ক্যারিবিয়ানরা তোলে ২১ রান। ৭৮ বলে ৬৯ রানে অপরাজিত থেকে যান আমব্রিস।

বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি তখন কার্যত টি-টোয়েন্টি। সময়ের ডাক শুনেই খেলার শুরুতেই সৌম্য ছুটতে থাকেন ঝড়ের বেড়ে। আরেক পাশে তামিম ইকবাল ৪ রানে জীবন পেয়ে দিতে থাকেন সঙ্গ।

পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৫০ রান। তাতে সৌম্যর অবদান ছিল ২০ বলে ৩৯, তামিম ১০ বলে ১০। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে দুটি বাউন্ডারিতে গা ঝারা দেন তামিমও। কিন্তু টানা তৃতীয় বলে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বিলিয়ে আসেন উইকেট। তিনে নামা সাব্বিরকেও ওই ওভারে ফেরান গ্যাব্রিয়েল।

সৌম্যর ব্যাট দলকে এগিয়ে নেয় আরও অনেকটা দূর। যথারীতি শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকেন মুশফিকুর রহিম। তবে দু'জনই সম্ভাবনাময় ইনিংসকে রূপ দিতে পারেননি পূর্ণতায়। ৪১ বলে ৬৬ করে বিদায় নেন সৌম্য। ২২ বলে ৩৬ করে ফেরেন মুশফিক।

মিঠুনের ১৪ বলে ১৭ রানের ইনিংসও শেষ হয়েছে কাজ শেষ করতে না পারার আক্ষেপে। সেই হতাশা উড়ে গেছে মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেকের ব্যাটে। একপাশে মাহমুদউল্লাহ আগলে রেখেছেন উইকেট। আরেকপাশে ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের পথে নিয়ে গেছেন মোসাদ্দেক।

৩ ওভারে যখন প্রয়োজন ২৭ রান, ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের বাঁহাতি স্পিনে মোসাদ্দেক হোসেনের তিন ছক্কা ও ১ চার নিশ্চিত করে দেয় জয়। ২০ বলে ফিফটি ছুঁয়ে মোসাদ্দেক গড়েন বাংলাদেশের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। মোসাদ্দেকের ব্যক্তিগত এই মাইলফলক রূপ নেয় দলের জয়ের মহাউচ্ছ্বাসে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ১৫২/১ (হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*; মাশরাফি ৬-০-২৮-০, সাইফ ৫-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৫-০-৫০-০, মোসাদ্দেক ২-০-৯-০, মিরাজ ৪-০-২২-১, সাব্বির ২-০-১২-০)।

বাংলাদেশ: ২২.৫ ওভারে ২১৩/৪ (তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬, সাব্বির ০, মুশফিকুর ৩৬, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, মোসাদ্দেক ৫২*; নার্স ৩-০-৩৫-০, হোল্ডার ৪-০-৩১-০, রোচ ৫-০-৫৭-০, গ্যাব্রিয়েল ৩-০-৩০-২, রিফার ৩.৫-০-২৩-২, অ্যালেন ৪-০-৩৭-১)।

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন

ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: শেই হোপ

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মেঘলা আকাশ, শুষ্ক পরিবেশে রাজধানীতে বাড়ছে গরম Jul 12, 2025
img
নয়াদিল্লিতে ধসে পড়ল ৪ তলা ভবন, অনেকে আটকা পড়ার আশঙ্কা Jul 12, 2025
img
অপরাধী যেই হোক, তার স্থান কখনোই আইনের ঊর্ধ্বে নয়: মির্জা ফখরুল Jul 12, 2025
img
সহশিল্পীর সঙ্গে রোম্যান্টিক ভঙ্গিমায় জয়া, ছবি ঘিরে চমক Jul 12, 2025
img
সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গেল ১ বাংলাদেশির Jul 12, 2025
img
গাইবান্ধায় পৃথক দুই ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের Jul 12, 2025
img
বিএনপির ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন Jul 12, 2025
img
ডব্লিউএইচও থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল Jul 12, 2025
img
হজ শেষে দেশে ফিরলেন ৮৭ হাজার ১০০ হাজি Jul 12, 2025
img
প্রেসিডেন্টকে টিভিতে দেখতে না চাওয়ায় ৬ মাসের কারাদণ্ড Jul 12, 2025
img
বাংলা সিনেমায় যা আছে, বলিউডে তা নেই : সঞ্জয় দত্ত Jul 12, 2025
img
গুজরাটে সেতু ধসে মৃত্যু বেড়ে ২১ Jul 12, 2025
img
দীর্ঘদিন বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন করণ জোহর! Jul 12, 2025
img
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস-বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই : মির্জা ফখরুল Jul 12, 2025
img
আজ ঢাকার আকাশ মেঘলা থাকবে Jul 12, 2025
img
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য: সুইচ বন্ধ হয় হঠাৎ Jul 12, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা চলমান রাখার সিদ্ধান্ত Jul 12, 2025
img
বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী Jul 12, 2025
img
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনে ত্রিপক্ষীয় মহড়া Jul 12, 2025
img
অদৃশ্য শত্রু এখন দৃশ্যমান: তারেক রহমান Jul 12, 2025