রাজশাহীর কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

রাজশাহীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। এটি রাজশাহী শহরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র এবং শিশুপার্ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

রাজশাহী শহরের পশ্চিম অংশে পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই পর্যটন কেন্দ্রটি। শহর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে রাজপাড়া এলাকায় পর্যটন মোটেলের পশ্চিমে এবং রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের পূর্ব দিকে অবস্থিত।

১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের প্রচেষ্টায় ৩২ দশমিক ৭৬ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় এই উদ্যান। ১৯৯৬ সালে উদ্যানটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) আওতায় দেয়া হয়। তারপর থেকেই চিড়িয়াখানাটির রক্ষণাবেক্ষণে নিজস্ব বরাদ্দ থেকে ব্যয় করে আসছে সিটি করপোরেশন।

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা আমাদের দেশে ঘোড়দৌড় বা রেস খেলার প্রচলন করে। খেলা দেখা ও বাজি ধরায় প্রচণ্ড উত্তেজনা সৃষ্টি হত। শহরাঞ্চলেই ঘোড়দৌড় মাঠ বা রেসকোর্স ছিল। রেসের নেশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসতেন। অনেকে এ খেলায় সর্বস্বান্ত হয়েছে। রাজশাহী শহরের রেসকোর্স ছিল পদ্মার পাড়ে। জনপ্রিয় এই খেলা একসময় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল রেসকোর্স ময়দান। বর্তমানে এই রেসকোর্স ময়দানেই গড়ে উঠেছে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা।

এই উদ্যানে মূল্যবান গাছের চারা রোপণ, ফুল গাছের কোয়ারি ও কুঞ্জ তৈরি, লেক ও পুকুর খনন, কৃত্রিম পাহাড় তৈরি অর্থাৎ সামগ্রিক কাজ শুরু হয় ১৯৭৪-৭৫ ও ১৯৭৫-৭৬ সালে।

১৯৮৩ সালে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুস সালাম একটি বড় ড্রামে এক জোড়া ঘড়িয়ালের বাচ্চা ছেড়ে দিয়ে চিড়িয়াখানার পত্তন করেন। ১৯৮৫ সালে জেলা প্রশাসক ও পরে বিভাগীয় কমিশনার ছৈয়দুর রহমান ও জেলা পরিষদের প্রকৌশলী আবদুর রহিম এর প্রচেষ্টায় একটি পূর্ণাঙ্গ চিড়িয়াখানায় উন্নীত হয়।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে বেশি আছে কবুতর ও রাজহাঁস। এর বাইরে রয়েছে মেছোবাঘ, বেবুন, গন্ধগোকুল, গিনিপিগ, চীনা মুরগি, বাজ, টিয়া ও চিল। পশু-পাখির মধ্যে আরও রয়েছে ওয়াক, বাজরিকা, বালিহাঁস, ঘুঘু, ঘোড়া, হরিণ, ভালুক, উদবিড়াল, হনুমান, বানর, খরগোশ, মাছমুরাল, নলবক, হাড়গিলা, পেলিক্যান, সাদা বক, ধূসর বক, পেলিক্যান, গাধা, মাছমুরাল ও কালিম পাখি। এছাড়া রয়েছে দুটি করে ঘড়িয়াল ও কচ্ছপ আর একটি অজগর।

এখানে ১৯৯৭ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে প্রায় সাড়ে ছয় বছর বয়সী একটি বাঘ আনা হয় রাজশাহীতে। সম্রাট নামের ওই বাঘটি ১২ বছর নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর মারা যায়। আগে চিড়িয়াখানায় একজোড়া সিংহ-সিংহী ছিল। ২০১৩ সালে ১৪ বছর বয়সে সিংহীটি মারা যায়। ওই বছর সিংহটিও মৃত্যুবরণ করে। এরপর চিড়িয়াখানায় আর কোনো সিংহ আনা হয়নি।

যাওয়ার উপায়:

ঢাকা থেকে রাজশাহী: ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে রাজশাহী যাওয়া যায়। সড়কপথে ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে বাসে উঠতে হবে। এজন্য গ্রিন লাইন, দেশ ট্রাভেলস, শ্যামলী ও হানিফসহ বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ৪শ থেকে ১ হাজার টাকা।

রেলপথে যাওয়ার জন্য রয়েছে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ও পদ্মা এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন। রোববার ব্যতীত প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ব্যতীত প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে কমলাপুর থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া শ্রেণিভেদে ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৮১ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া আকাশ পথে ঢাকার শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারের বিমানে রাজশাহী যাওয়া যায়।

রাজশাহী শহর থেকে রিক্সা বা অটোতে যাওয়া যায় উদ্যানে।

কোথায় থাকবেন: রাজশাহীতে থাকার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন মোটেল (০৭২১-৭৭৫২৩৭)

হোটেল হক্স ইন (০৭২১-৮১০৪২০)

নাইস ইন্টারন্যাশনাল(০৭২১-৭৭৬১৮৮)

মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭১১০০)

ডালাস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৮১১৪৭০)

হোটেল শুকরান (০৭২১-৭৭১৮১৭)

এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকায় রুম পাওয়া যাবে।

 

 

টাইমস/এইচইউ/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরে দাঁড়ালেন পাকিস্তানের প্রধান কোচ Dec 17, 2025
img
দেশ-বিদেশ ঘুরতে প্রস্তুত বাঁধনের থ্রিলার ঘরানার সিনেমা ‘মাস্টার’ Dec 17, 2025
দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি বিপণন ডিপোর উদ্বোধন Dec 17, 2025
জোট নয়, আসন সমঝোতা: বদলাচ্ছে বিএনপির কৌশল Dec 17, 2025
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বলিউড সিরিজ, নেতৃত্বে আরিফিন শুভ Dec 17, 2025
img
শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ Dec 17, 2025
img
শোকস্তব্ধ ডিনো মোরিয়া, প্রাক্তনের দুঃসময়ে এগিয়ে এলেন বান্ধবী বিপাশা! Dec 17, 2025
img
ইউরোপকে পুতিনের কড়া হুঁশিয়ারি Dec 17, 2025
img
ভারতের হাইকমিশনের ইট খুলে নেওয়ার বার্তা দিলেন ডাকসু নেতা Dec 17, 2025
img
ক্যান্সারের কাছে হার মানলেন অভিনেতা ‘বাক রজার্স’ Dec 17, 2025
img
এমন কিছু ঘটবে যা সারাদেশ কাঁপাবে, বান্ধবীকে হাদির হামলাকারী ফয়সাল Dec 17, 2025
img
চেয়ারে কেউ একবার বসলে সে আর ছাড়তে চায় না: ধর্ম উপদেষ্টা Dec 17, 2025
img
বিতর্কিত অঙ্গভঙ্গির ছবি শেয়ার করে মুকুট হারালেন মিস ফিনল্যান্ড Dec 17, 2025
img
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গ্রেপ্তার, না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 17, 2025
img
ভারতের হাইকমিশনারকে কঠিন হুসিয়ারী দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ Dec 17, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে ভারতের নসিহত অগ্রহণযোগ্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 17, 2025
img
রোমাঞ্চ নিয়ে ফের পর্দায় ‘ফলআউট’ Dec 17, 2025
img
সমালোচনার পর শাড়িতে ধরা দিলেন স্বস্তিকা! Dec 17, 2025
img
বড়দিন উপলক্ষে কুকিজ তৈরিতে ব্যস্ত রিদ্ধিমা ও ধীর Dec 17, 2025
img
বড়দিন ও থার্টিফার্স্ট নাইটে বাড়তি সতর্কতা, বিশেষ নিরাপত্তায় পুলিশ Dec 17, 2025