একটা সময় তিনি ভারতের জার্সি গায়ে মাঠ কাঁপাতেন। ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে দলের সাফল্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন। আর এবার, কোচ হিসেবে মাত্র আট মাসের মাথায় দেশকে এনে দিলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা। গৌতম গম্ভীর!!! একজন ব্যাটসম্যান থেকে কোচ হয়ে ওঠার এই যাত্রাটা যতটা রোমাঞ্চকর, ততটাই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে তাঁর বেতন ও সুযোগ-সুবিধা।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন গম্ভীর। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে তাঁর চুক্তি ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দায়িত্বের বিনিময়ে কত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তিনি?
ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাসেনড্যান্টস জানিয়েছে, গম্ভীরের বার্ষিক বেতন প্রায় ১৪ কোটি রুপি। এই অঙ্ক তাঁকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া কোচদের একজন করেছে। তুলনামূলকভাবে, তাঁর পূর্বসূরি রাহুল দ্রাবিড় বছরে পেতেন ১২ কোটি রুপি।
বেতন ছাড়াও বিসিসিআই গম্ভীরকে দিচ্ছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। বিদেশ সফরের জন্য দৈনিক ২১ হাজার রুপি ভাতা, বিমানের বিজনেস ক্লাস টিকিট, বিলাসবহুল হোটেলে থাকার সুবিধা, লন্ড্রি খরচ,—সবই বহন করছে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড। এছাড়া লজিস্টিকসহ আরও বেশ কিছু বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। বিসিসিআইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। বিশ্বমানের কোচকে আকৃষ্ট করতে হলে ও ধরে রাখতে হলে তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা ও আরামদায়ক কর্মপরিবেশ দিতে হবে।
গম্ভীরের সঙ্গে বিসিসিআইয়ের চুক্তিতে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এই তিনটি টুর্নামেন্টে ভারত ভালো করলে গম্ভীর পাবেন বিশাল অঙ্কের বোনাস।
ভারত ইতোমধ্যে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে। তাই বোর্ড শিগগিরই গম্ভীর ও তাঁর সাপোর্ট স্টাফদের জন্য বোনাস ঘোষণা করতে পারে।
গম্ভীর শুধু পারিশ্রমিক ও সুবিধার জন্য আলোচনায় নেই, তিনি ক্রিকেটীয় কৌশল নিয়েও প্রশংসিত হচ্ছেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ভারত খেলেছে দুবাইয়ে, যেখানে আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি। উইকেট হবে মন্থর, স্পিন ধরবে—এটা আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন গম্ভীর। তাই ব্যাটার যশস্বী জয়সোয়ালকে বাদ দিয়ে স্কোয়াডে যুক্ত করেন স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে। টুর্নামেন্টের শেষভাগে বরুণই হয়ে ওঠেন গম্ভীরের তুরুপের তাস।
ভারতের খেলোয়াড়রা এখন ব্যস্ত আইপিএলে। এরপর আসছে ইংল্যান্ড সফর, যেখানে জুন-আগস্টের মধ্যে ভারত খেলবে পাঁচটি টেস্ট। এই সফরের জন্য শুধু জাতীয় দল নয়, ‘এ’ দলের সঙ্গেও যাবেন গম্ভীর। উদ্দেশ্য একটাই, শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ গড়ে তোলা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, অতীতে ভারতের কোনো কোচকে ‘এ’ দলের সফরে যেতে দেখা যায়নি। গম্ভীরের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করছে, তিনি শুধু বর্তমান দল নয়, ভবিষ্যতের জন্যও ভারতীয় ক্রিকেটকে গড়ে তুলতে কাজ করছেন।
গৌতম গম্ভীরের কোচিং অধ্যায় কতটা সফল হবে, সেটি বলবে সময়। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর পদক্ষেপগুলোই বলে দিচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সঠিক মানুষকেই বেছে নিয়েছে।
এসএম/টিএ