বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে মন্তব্য করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচনা হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। এসব অপশক্তিকে প্রতিহত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।বুধবার ঢাকা লেডিস ক্লাবে বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা এবং চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।”
এর আগে গত সোমবার ভারতের এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের বলেছিলেন, “বাংলাদেশে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের উত্থান এবং সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’কে পরাস্থ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের গভীর দৃষ্টি রয়েছে এবং তাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, “গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বরং পুরো জাতিকে মোটা দাগে ও অযৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে”।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মন্তব্য করার আগে, বিশেষ করে সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলার আগে সেসব বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখা উচিত বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এই বিবৃতিতে বলা হয়।
রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, “একটি রাষ্ট্র ও সমাজের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক সম্প্রীতি ও মূল্যবোধ যদি বিনষ্ট করে দেওয়া যায়, তখনই সমাজব্যবস্থা অবক্ষয়, ভঙ্গুর, নিষ্ঠুর ও অমানবিক হয়ে ওঠে। ভঙ্গুর রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা উগ্রবাদ আর চরমপন্থা বিকাশের এক উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়।”
“দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সমুন্নত রাখতে চরমপন্থা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করার পাশাপাশি গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে যেকোনো মূল্যে বিচারের সম্মুখীন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করাই হবে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।” বলেন তিনি।
দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মন্তব্য করে তারেক বলেন, “দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের নিরাপত্তাহীন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সরকার, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি কিংবা অন্য কোনো কাজে হয়ত বেশি মনোযোগী থাকার কারণে, আমাদের নারীরা নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে কিনা, এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন আছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “শুধু একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যই মাফিয়া সরকারের পতন ঘটেনি—একথা যেমন সত্য। তার চেয়েও আরও চরম সত্য হয়ত একটি সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন না করার জন্যই কিন্তু মাফিয়া সরকারের নির্মম পতন হয়েছিল। সুতরাং একটি নির্বাচনকে শুধুমাত্র কোনো একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করার অবকাশ নেই।”
“প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পান। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ ও সরকার গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সর্বোপরি প্রতিটি সফল ও কার্যকর নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের চুক্তি নবায়িত হয়। রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের মালিকানার সম্পর্ক গভীরতর হয়।” বলেন তারেক রহমান।
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নীতি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী এবং কার্যকর করার উপায় শুধুমাত্র কেতাবি সংস্কারের ওপর নির্ভর করে না। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নীতি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের গণতান্ত্রিক চর্চার ওপর। বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করেন।”
“সুতরাং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিকামী জনগণের বিচার বুদ্ধির ওপর আস্থাহীনতার প্রয়াস শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”
বিএনপির ভারপ্রান্ত চেয়ারম্যান বলেন, “একটি রাষ্ট্রের একটি সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদী। সুতরাং রাজনৈতিক পরিক্রমা প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং টেকসই কার্যকর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন জনগণ এবার নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত।”
“সুতরাং জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও দুর্ভোগ কমানোর সব ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের ভোট জনগণের কাছে দিয়ে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে—এটি গণতান্ত্রিক জনগণের প্রত্যাশা,” বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রজন্মদের জন্য একটি বৈষম্যহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্বাচিত জাতীয় সরকারের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্র ও রাজনীতি মেরামতের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য পূরণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় জাতীয় সরকার গঠন করবে, যা অতীতেও আমরা জাতির সামনে কমিট করেছি।”
এমআর