ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আনতে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেছেন।
আজ সোমবার (৮ আগস্ট) বিবিসি বাংলার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, শেখ হাসিনার দুই সন্তানের পাশাপাশি আওয়ামী লীগে একটা ভূমিকা থাকবে তার ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিরও। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের দলীয় নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে যে ‘মডেল’ অনুসরণ করছে, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও নিজের ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঠিক সেটাই করতে চাইছেন দলীয় সভাপতি।
বয়সজনিত কারণে ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য সোনিয়া গান্ধী যতই সক্রিয় রাজনীতি থেকে আড়ালে চলে যাচ্ছেন, ততই কংগ্রেসের নেতৃত্বর হাল ধরছেন তার ছেলে-মেয়ে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীকে একেবারে সামনে এবং প্রিয়াঙ্কাকে ঠিক তার পেছনে রেখে যেভাবে ভারতের প্রধান বিরোধী দলটি পরিচালিত হচ্ছে- শেখ হাসিনা সেই মডেলটাই আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে চাইছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিবিসি লিখেছে, মাত্র মাসদুয়েক আগেও দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) রিজিওনাল ডিরেক্টর পদে ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনির্দিষ্টকালীন ছুটিতে পাঠানোর পর শেখ হাসিনার মেয়ে এখন পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ এখন মার্কিন নাগরিক ও আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা, তবে মায়ের পর দলের প্রধান মুখ ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনিই। দেশ-বিদেশের মিডিয়াকে সাক্ষাৎকারও দিচ্ছেন ঘন ঘন।
প্রতিবেদন বলছে, তবে সায়মা ওয়াজেদ যেহেতু মায়ের সঙ্গে একই শহরে ও একই টাইম জোনে রয়েছেন, শেখ হাসিনাকে তিনি সরাসরি সাহায্য করতে পারছেন অনেক বেশি। অনলাইনে মায়ের দেওয়া ভাষণের খসড়া তৈরিতে, কর্মসূচির ক্যালেন্ডার স্থির করতেও সাহায্য করছেন।
এমনকি বাইরের দর্শনার্থীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি দেখা করার ক্ষেত্রে যেহেতু অনেক বিধিনিষেধ আছে- তাই সে কাজটাও এখন অনেকাংশেই সায়মা ওয়াজেদের ওপর বর্তেছে। গত দু মাসে তিনি বেশ কয়েকবার এরকম বৈঠকও করেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিবিসিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে, তবে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।
বিবিসি বলছে, শেখ হাসিনা এখন ধীরে ধীরে অনেক দায়িত্বই ছেলেমেয়ের ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন বা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। শেখ হাসিনার এই ‘সাকসেসন প্ল্যান’ নিয়ে ভারতে ও ভারতের বাইরে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
তাঁরা অনেকেই দলীয় নেতৃত্বে এই ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা’ মডেল অনুসরণ করার বিষয়টি নিয়ে অবহিত এবং সেটি নিশ্চিতও করেছেন। কিন্তু এই বিষয়টি আওয়ামী লীগের ভেতরে এতটাই স্পর্শকাতর একটি ইস্যু, যে তারা কেউই এটি নিয়ে ‘অন রেকর্ড’ মুখ খুলতে চাননি।
অবশ্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত দাবি করছেন এই বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে এখনও কোনো আলোচনাই হয়নি।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদককে মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আপনি যে সাকসেসন প্ল্যানের কথা বলছেন সেটা এখন আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যেই পড়ে না। কে কী পদ-পদবী পেলেন, সেটা এখন ভাবারই সময় নয়।’
তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যেও আমরা এটা নিয়ে এখন কথাবার্তা বলছি না। আপনারা জানেন, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, সেই লক্ষ্যেই সব চেষ্টা নিয়োজিত করা হচ্ছে।’
সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘তবে এটুকু বলতে পারি - সভানেত্রীর পরিবারের সব সদস্য যেমন, তেমনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী যে যেখানে আছেন সবাই এই একটা লক্ষ্যেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন।’ মোহাম্মদ আরাফাতের কথায় ইঙ্গিত, সজীব ওয়াজেদ আগে থেকেই ছিলেন, এখন সায়মা ওয়াজেদও আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এর পর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি। দেশে ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে অসংখ্য, হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিও। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে এসেছে নিষেধাজ্ঞা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
টিকে/