রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘রাজনীতির সব হিসাবগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ভোট বলতে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনৈতিক শক্তি এবং আপাতঃ জনপ্রিয়তাকে ভোটে যেতে নিয়ামক হিসেবে মনে করতাম।
তবে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পর যে ন্যারেটিভ তৈরি হয়ে গেছে; তাতে গুণ্ডামি, চাঁদাবাজি, পেশিশক্তি ব্যবহার করে, ১০টা হোন্ডা, ১০টা গুন্ডা দিয়ে এখন আর ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে আনা যাবে না; ব্যালট বাক্স ছিনতাই করা যাবে না। এই জমানাতে যখন প্রযুক্তি পৃথিবীকে ডমিনেট করছে, যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে, যখন মানুষের কর্মশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে রোবটিক শক্তি, তখন এসব করে ভোট পাওয়া সম্ভব নয়।’
রনি বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে দুটো সংগঠন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারে শীর্ষে আছে। তারা সেই অনুযায়ী প্রচার এবং প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এর মধ্যে এক নম্বরে আছে জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে আর দুই নম্বর আছে হিজবুত তাহরীর অপ্রকাশ্যে। দে আর ডমিনেটিং দ্য হোল পলিটিক্স।
জামায়াতে ইসলামীর একটা নমুনা বলি; আমি যে বিল্ডিংয়ে থাকি তার মালিকের পক্ষের যে ভদ্রলোক, তিনি আজীবন বিএনপি করতেন। এমনকি আওয়ামী লীগ জমানাতেও বিএনপি করেছেন। গত সপ্তাহে তার সঙ্গে আমার দেখা হলো।’
‘তিনি দৌড়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে লিফটে চলে আসলেন।
এসে তিনি যে কথাবার্তাগুলো বললেন, তাতে মনে হলো যে তিনি জামায়াতের ভাষায় কথা বলছেন। শিবিরের বিজয়ে তার চোখে মুখে রীতিমতো পূর্ণিমার চাঁদ ঝলসে উঠছে। আমি এই যে বিএনপির একজন কট্টরপন্থী সমর্থক, হঠাৎ করে এই অল্প কয়েকদিনের মধ্যে কি করে শিবিরের সমর্থক হলো তা আমার মাথায় ঢুকে না। এছাড়া আমার নিজের নির্বাচনী এলাকার একজন কট্টর আওয়ামী লীগ যুবক হঠাৎ করে দেখি যে গত তিন চার মাস ধরে দাড়ি রেখে সে সারাদিন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ করে। সে আমার কাছে আসছে।
আমি বললাম, তুমি কাজটা করলা কি? তুমি তো এখন সারাক্ষণ ওই জেলা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ঘুরো। তোমার এই অবস্থা হলো কেন? আমি তো তোমার দাড়ি দেখে মনে করেছিলাম তুমি চরমোনাইতে যোগদান করেছো। কিন্তু জামায়াতে কেন? তো দেখলাম যে তার পুরো মন, মস্তিষ্ক, চেহারা, চরিত্র, আচরণ, কথাবার্তা, দৃষ্টিভঙ্গি সবকিছু জামায়াতি হয়ে গেছে। সে আগের মতো আর আমার সামনে বসে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসে।’
‘আমি দুটো উদাহরণ বললাম আমার বাড়িতে এবং আমার এলাকাতে। আমার এলাকার আরেকটা ছেলে আছে আধা পাগল। এসব আধা পাগল লোকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তারা মিথ্যা কথা বলতে পারে না। তো সে একদিন টেলিফোন করে বলল, ভাইয়া চারিদিকে শুধু জামায়াত আর জামায়াত, ঘরে ঘরে জামায়াত। আল্লাহ গো এত জামায়াত কোথায় ছিল।’
রনি বলেন, ‘এখন আপনি দেখেন, চরমোনাই পীরের সঙ্গে জামায়াতের একসময় নীতিগত দ্বন্দ্ব ছিল। তো তারা এখন একত্র হয়ে গেছে। জামায়াত যা করছে চরমোনাই তাই করছে। কেউ জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলছে না। এর কারণটা হলো মনোজগতে জামায়াত কতগুলো জিনিস তৈরি করে ফেলেছে। এখন কেন যেন সবার ভাষা চেঞ্জ হয়ে গেছে। সবার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ হয়ে গেছে। এবং সামনে যে নির্বাচন আসছে, সে নির্বাচনে গিয়ে পেশিশক্তি কাজে আসবে না। গুণ্ডামি করা যাবে না। ব্যালট বক্সে ছিনতাই করা যাবে না। চাঁদাবাজদেরকে মানুষ ভোট দেবে না।
মানুষ সাহসী হয়ে গেছে। ফলে কি হলো? এই যে আমাদের দেশে যে ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি, সেই ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি রীতিমত হুমকির মুখে পড়েছে।’