জাতীয় সংস্কার ধরে রাখলে মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে : আইন উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘বাংলাদেশে প্রধান পাঁচটি সমস্যার একটি হলো ন্যায়বিচার সংকট। আমরা আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক অনেক সংস্কার করেছি, যা অতীতে বাংলাদেশে কখনো হয়নি। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এই সংস্কারগুলো ধরে রাখলে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেটে লিগ্যাল এইড বিষয়ক পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের নানা ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, ‘মামলা জট কমাতে আমরা প্রথমে লিগ্যাল এইডে যাওয়াকে বাধ্যতামূলক করেছি। সেখানে অসন্তুষ্ট হলে আদালতে যেতে কোনো সমস্যা নেই।’

আইন সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ (২০২৫ সালের ৩৫ নং অধ্যাদেশ)-এর ধারা ১-এর উপধারা (২)-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি জেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রচলিত আইনে নিষ্পত্তির তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগ সময় লাগে।

প্রচলিত আদালতে যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর সময় লাগে লিগ্যাল এইড আদালতে সেটি নিষ্পত্তিতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। একইভাবে প্রচলিত আইনে মামলার পর বিচারিক আদালতে রায়ের পর বহু মানুষ উচ্চ আদালতে যায়। কিন্তু লিগ্যাল এইডে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৯০ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে, তারা আদালতে মামলা করতে যায় না।’

লিগ্যাল এইডের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এ রকম একটা রিসোর্স থাকলেও রাষ্ট্র কোনো দিন এতে মনোযোগ দেয়নি। এটা এমন এক বিচারিক প্রক্রিয়া, যেখানে সময় অনেক কম লাগে, খরচ কম হয় এবং ভোগান্তিও অনেকাংশে কমে যায়। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাষ্ট্র আগে সেভাবে মনোযোগ দেয়নি। এখানে কাজ করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা প্রচলিত আদালতের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করি। অথচ অনেক কম টাকা দিয়ে লিগ্যাল এইড আদালতের মাধ্যমে মানুষের বিচারপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা তৈরি করা যায়। সেই চিন্তা থেকে লিগ্যাল এইডের অধ্যাদেশ করা হয়েছে।’

আদালতে যাওয়ার আগে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লিগ্যাল এইড আইনে মামলা করা আগে বাধ্যতামূলক ছিল না। মামলার জট কমাতে এবার আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। সেখানে যাওয়ার পর কেউ যদি অসন্তুষ্ট থাকেন তাহলে বিচারিক আদালতে যেতে পারবেন।’

১১টি আইনে মামলার ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আইন সংশোধনের ফলে এখন থেকে ১১টি আইনে মামলার ক্ষেত্রে প্রথমে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক। পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, সম্পত্তির ভাগ, যৌতুক, চেকের মামলা, বাড়িভাড়াসহ ১১ ধরনের আইনে মামলা করার পূর্বে বাধ্যতামূলকভাবে লিগ্যাল এইড আদালতে যেতে হবে।’

বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগে একটি জেলায় একজন বিচারক থাকলে এখন তিনজন এই দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে একজন সিনিয়র সহকারী জজ, উনার চেয়ে একজন সিনিয়র জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এটি কার্যকর করা গেলে দেশে মামলার জট কমে যাবে। দেশের দরিদ্র-অসহায় মানুষের ন্যায়বিচার ও অধিকার সুরক্ষার জন্য অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘লিগ্যাল এইড ছাড়াও আমরা অনেক কাজ করেছি, যা কোনো দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি। মামলার নিষ্পত্তি দ্রুতগামী করতে আমরা সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করেছি। বিচারিক পদ সৃজনের ক্ষমতা আগে রাজনৈতিক মন্ত্রীদের হাতে ছিল, আমরা এটা চিফ জাস্টিস অফিসের কাছে নিয়ে গেছি। নিজে হাতে করে নিয়ে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সাইন করে নিয়ে এসেছি। ফলে এক দিনে সোয়া দুই শ বিচারকের পদ সৃষ্টি হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বন্ধু রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিনিধিদের মধ্যে জার্মান অ্যাম্বাসি, ঢাকার ডেপুটি হেড অব কর্পোরেশন জেনিস হোসাইন, জিআইজেড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মারটিনা বুকার্ড, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, সিলেটের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) শেখ আশফাকুর রহমান। এর আগে মঞ্চায়ন করা হয় মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বিষয়ক নাটক।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিবিরের আয়জনে জবিতে ‘কাওয়ালি সন্ধ্যা’ Nov 08, 2025
img
নির্বাচনবিরোধীদের ৭ নভেম্বরের চেতনায় পরাজিত করতে হবে : আমীর খসরু Nov 08, 2025
img
নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই ব্যবসা চলবে না : সাদিক কায়েম Nov 08, 2025
img
ভিয়েতনামে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১ বাংলাদেশির Nov 08, 2025
img
‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’ Nov 08, 2025
img
সাতক্ষীরায় ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে : হাবিব Nov 08, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশ মহাবিপর্যয়ে পড়বে : প্রিন্স Nov 08, 2025
img

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সাইবার অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু Nov 08, 2025
img
রিজভীর পা ধরে সালাম করা সেই সার্জেন্টকে প্রত্যাহার Nov 08, 2025
img

প্রশ্ন সায়ন্থের

ঘি খেতে চাইলে চামচ দিয়ে ভদ্রভাবে খান, আঙুল বাঁকিয়ে কেন ? Nov 08, 2025
img
নগরকান্দায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিজান গ্রেপ্তার Nov 08, 2025
img
ইসলামী মূল্যবোধকে জিয়াউর রহমান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন: মাহাদী আমিন Nov 08, 2025
img
বিশেষ অভিযানে মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ৩৭ Nov 08, 2025
img
সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কৃষকদলের দুই নেতার Nov 08, 2025
img
শাটডাউনে হাজারো ফ্লাইট বাতিল যুক্তরাষ্ট্রে Nov 07, 2025
img
গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে : গোলাম পরওয়ার Nov 07, 2025
img
জগন্নাথের ১৫ শিক্ষার্থীকে নিয়ে নৌকাডুবি Nov 07, 2025
img
নিজেদের ভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি: সন্দীপ্তা সেন Nov 07, 2025
পিতা মাতার প্রতি ছেলের কর্তব্য | ইসলামিক জ্ঞান | Nov 07, 2025
ফেলানি নিয়ে মুক্তি পেল জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় টিজার Nov 07, 2025