চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘ দেড় দশক পর ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দানের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বিভিন্ন জোট থেকে মোট ১১টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থীরা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়াও নানা অরাজনৈতিক জোট ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। সবার দৃষ্টি কাড়ছে প্রীতিলতা হলের স্বতন্ত্র সম্প্রীতি প্যানেল। নুসরাত জাহান তৃনা ও নুজহাত তাহসিনা কারিমার নেতৃত্বে গঠিত এই প্যানেলের মনোনয়নপত্র জমা হয় ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায়।
প্যানেলভুক্ত প্রার্থীরা বলেন, তারা শতভাগ অরাজনৈতিক ছাত্রী। শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, অধিকার এবং সম্প্রীতিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। প্যানেলের প্রার্থীরা ঘোষণা অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের ছায়াতলে দাঁড়াইনি। প্রীতিলতা হলের ছাত্রীদের স্বার্থই হবে আমাদের একমাত্র অঙ্গীকার।”
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সমর্থিত ‘দ্রোহ পর্ষদ’ ভিপি পদে ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ, জিএস পদে ইফাজ উদ্দিন আহমদ ইমু এবং এজিএস পদে শেখ জুনায়েদ কবিরকে মনোনয়ন দেয়।
ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, জিএস পদে মো. শাফায়াত হোসেন এবং এজিএস পদে আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি পদে ইব্রাহীম হোসেন রনি, জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব এবং এজিএস পদে সাজ্জাদ হোসাইন মুন্নাকে মনোনয়ন দিয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের অগ্রণী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ ভিপি পদে মাহফুজুর রহমান, জিএস পদে আরএম রশীদুল হক দিনার এবং এজিএস পদে জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রার্থী করেছে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ থেকে ভিপি পদে আব্দুর রহমান রবিন, জিএস পদে আব্দুর রহমান এবং এজিএস পদে মো. রাকিব লড়বেন।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থনে গঠিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ ভিপি পদে ধ্রুব বড়ুয়া, জিএস পদে সুদর্শন চাকমা এবং এজিএস পদে জাকিরুল ইসলাম জসিমকে মনোনয়ন দিয়েছে।
সুফিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক জোট ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ থেকে ভিপি পদে মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম, জিএস পদে মুহাম্মদ ইয়াসিন উদ্দিন সাকির এবং এজিএস পদে মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম শাহেদ প্রার্থী হয়েছেন।
অরাজনৈতিক সংগঠন ও ক্লাবগুলোর সমর্থনে গঠিত ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলে ভিপি পদে তাওসিফ মুত্তাকী চৌধুরী, জিএস পদে সাজ্জাদ হোসেন এবং এজিএস পদে সাঈদ মুহাম্মদ মুশফিক হাসান লড়বেন।
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’ থেকে ভিপি পদে আবির বিন জাবেদ, জিএস পদে চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ এবং এজিএস পদে পলাশ দে মনোনয়ন পেয়েছেন।
অন্যদিকে, ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’ প্যানেল ভিপি পদে তামজিদ উদ্দিন, জিএস পদে সাকিব মাহমুদ রুমী এবং এজিএস পদে মো. রোমান রহমানকে প্রার্থী করেছে। যদিও এ প্যানেলের নাম পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হল সংসদ ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে মোট ২৩২টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র নিয়েছলেন ১ হাজার ১৬২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৫২৮ জন। আর ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের ২০৬টি পদে মনোনয়ন নিয়েছেন ৬৩৪ জন। সর্বশেষ দিন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৯৩০ জন। এর মধ্যে চাকসুতে ৪২৯ জন, হল ও হোস্টেল সংসদে ৫০১ জন। অর্থাৎ, মনোনয়নপত্র জমা দেননি ২৩২ জন শিক্ষার্থী।
মনোনয়নপত্র জমার পর এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার)। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, এবারের চাকসু নির্বাচনে ২৮টি, হল সংসদের ১৬টি এবং হোস্টেল সংসদে ১০টি পদে ভোটগ্রহণ হবে। প্রার্থীদের মাদক পরীক্ষার (ডোপ টেস্ট) ফল ইতিবাচক হলে প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। চাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৬৩৪ জন। আগামী ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
টিকে/