সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক : গোলাম মাওলা রনি

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘গত কয়েকদিন আগে এনসিপির শীর্ষ নেতার যে বক্তব্য সেটি হলো, বাংলাদেশে যেকোনো সময় সেনা শাসন চলে আসতে পারে বা এনসিপি সেনা শাসনের ভয় পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে সেনা শাসন নতুন কোনো ঘটনা নয়। অতীতে বহুবার ঘটেছে, আবার অর্ধেক সেনা শাসন অর্ধেক সিভিল শাসন এই দুটো মিলিয়ে ১/১১ নামে বাংলাদেশে যে একটা ক্রান্তিকাল আমরা পার করেছি, সেই আতঙ্ক আমাদেরকে এখনো তাড়া করছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা মাফিয়া চক্র সারা দেশকে এমনভাবে চালাচ্ছে যে গত এক বছরে দরিদ্রতা বেড়েছে।ব্যবসা-বাণিজ্য সূচক সবকিছুর মারাত্মকভাবে অবনতি হয়েছে। কিন্তু ৬০০০ নতুন কোটিপতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। যে ঘটনা কখনো শুনিনি যে, একজন ডিসি পদে নিয়োগের জন্য শত কোটি টাকার লেনদেন হয়; একজন সচিব পদে নিয়োগের জন্য শত কোটি টাকার লেনদেন হয় এবং এগুলোর চেক, তথ্য-প্রমাণ সহকারে এখন যেভাবে পত্রপত্রিকায় আসছে, তাতে এগুলো অবিশ্বাসও করা যাচ্ছে না।’

রনি বলেন, ‘রাষ্ট্র থেকে যখন কারো বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, সেই মানুষ এই রাষ্ট্রের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে বুক ফুলিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

ফলে, যেসব দুর্নীতিবাজ রয়েছে, তাদেরকে আওয়ামী লীগ নিজের হাতে করে এই সরকারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে। আপনি দেখুন তো শেখ হাসিনার কাছাকাছি, শেখ হাসিনার স্নেহভাজন, প্রিয়জন, একজন সিঙ্গেল লোক জেলখানাতে আছে নাকি? কেউ নাই, আর যারা আছে তারা আওয়ামী লীগের বাকির খাতায়, আওয়ামী লীগের খরচের খাতায় এবং তাদেরকে বর্তমান সরকার একেবারে হালুম করে ধরে বলছে যে, আমরা বিচার করব ইত্যাদি ইত্যাদি।’

‘এর ফলে বাংলাদেশে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেই শূন্যতার মধ্যে বিশাল শূন্যতা। আর প্রতি মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার জন্য বিকল্প একটা ব্যবস্থা করার জন্য যে হুমকি দিচ্ছে, এর ফলে পুরো বাংলাদেশের যে বন্ধন, একে অপরের সঙ্গে যে সংযোগ, এই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।

এখন বিএনপি-জামায়াতের বিরোধ, জামায়াত-এনসিপির বিরোধ, এনসিপি-বিএনপির বিরোধ, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ড. ইউনূসের দূরত্ব, উপদেষ্টা বনাম উপদেষ্টাদের মধ্যে দূরত্ব, প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব; সব মিলিয়ে একটা ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তৈরি হয়েছে।’

‘কেউ কাউকে দুই টাকা দিয়ে বিশ্বাস করতে পারছে না। আর এই অবিশ্বাসের কারণে মনের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে, ভয় তৈরি হচ্ছে, সেই ভয় থেকেই এনসিপির মুখ দিয়ে যেটা বলা হচ্ছে যে, একটি সামরিক শাসন আসতে পারে। যারা ক্ষমতাধর, যারা ক্ষমতার চেয়ারে বসে, সে যদি স্বপ্ন দেখে যে তার চেয়ার চলে গেছে; ওই স্বপ্নের যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। তো এনসিপি এখন ড্রাইভিং সিটে রয়েছে।হাসনাত সারজিসরা গত এক বছর যাবত দেশ চালাচ্ছে।

কাজেই তাদের মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যায়, তাদের মধ্যে যদি ভয় এবং আতঙ্ক দেখা দেয়; তাহলে ওটা অ্যাভয়েড করার কোনো কারণ নেই। কাজেই এই যে আরেকটি সামরিক শাসনের যে আতঙ্ক এনসিপি অনুভব করছে, ঠিক সেইম আতঙ্ক কিন্তু বিএনপিও অনুভব করছে। আর ড. ইউনূস নিজে একটা সেফ এক্সিটের জন্য তিনি সবকিছু করতে এই মুহূর্তে রাজি। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই একটার সঙ্গে আরেকটা মিলন ঘটানো যাচ্ছে না। কারণ, যে শূন্যতা এটা খুব বেশি।’

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে চিত্রনায়িকা পরীমনির শোক প্রকাশ Dec 30, 2025
img
বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন বেগম খালেদা জিয়া: জয়া আহসান Dec 30, 2025
img
পেছালো শাকিব খানের ‘সোলজার’,মুক্তি অনিশ্চিত Dec 30, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে মাশরাফি বিন মর্তুজার শোক প্রকাশ Dec 30, 2025
img
বেগম জিয়ার জানাজা পড়াবেন বাইতুল মোকাররমের খতিব Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় ডাকসুর দোয়া মাহফিল Dec 30, 2025
img
জাতি হারিয়েছে একজন অভিভাবক: হানিফ সংকেত Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক গেজেট জারি Dec 30, 2025
img
রাষ্ট্রীয় শোকে সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা Dec 30, 2025
img
দেশের মানুষই ছিল তার পরিবার, অস্তিত্ব : তারেক রহমান Dec 30, 2025
img
বার্সেলোনার বিপক্ষে লড়াই করবে মেসির মায়ামি Dec 30, 2025
img
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে মাহফুজ আলমের শোক Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাফুফের শোক, সকল ম্যাচ স্থগিত Dec 30, 2025
img

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় যেসব সিদ্ধান্ত Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের শোক Dec 30, 2025
img
কবর খোঁড়ার প্রস্তুতি চলছে বেগম খালেদা জিয়ার Dec 30, 2025
img
মা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তারেক রহমানের আবেগঘন স্ট্যাটাস Dec 30, 2025
img
বুধবারের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা স্থগিত Dec 30, 2025
img
বিপিএল: খেলা স্থগিত, মাঠ ছাড়তে নারাজ সমর্থকরা Dec 30, 2025
img
খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব, জনসেবা জাতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে : বাঁধন Dec 30, 2025