একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও জনগণ তা রুখে দেবে: মাসুদ

জনগণ আওয়ামী লীগকে আর কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টির সুযোগ দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও জনগণ তা রুখে দেবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নিষিদ্ধ ঘোষিত গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের ঢাকাসহ সারাদেশে ঝটিকা মিছিল, গুপ্ত হামলা, দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের দুর্নীতির টাকায় বিদেশে পালিয়ে থেকে দেশে কিছু সন্ত্রাসী দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রাজপথ দখলে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে। জনগণ তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেবে না, প্রতিহত করবে। প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না। তখন কিন্তু আইনের দোহাই দেওয়া চলবে না। জনগণ যদি আইন হাতে তুলে নেয় তবে আওয়ামী লীগের পরিণতি হবে ভয়াবহ।

তিনি বলেন, যারা পিআর বুঝে না, তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা নাই। জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দিয়ে সব গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে পিআর পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ড. মাসুদ বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী বিপ্লবী নেতা আখতার হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্থা করার ঘটনায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন দায় এড়াতে পারবে না। সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত আওয়ামী দোসরদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। ওই ঘটনার পর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল, গুপ্ত হামলা, দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি আওয়ামী লীগসহ তাদের শরিক ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ড. মাসুদ বলেন, জাতীয় পার্টি আর জাসদের (ইনু) মাধ্যমে ভোটের মাঠে ঢুকতে চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।

এজন্য তারা সারাদেশে বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চক্রান্ত করছে। সরকার এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশ ও জাতির জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা রুখে দিতে ড. মাসুদ আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার নিশ্চিত না হলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ব ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ এককভাবে দেশের জনগণের ওপর জুলুম করেনি। ১৪ দলীয় জোট সমন্বিতভাবে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন করেছে। প্রতিটি গণহত্যার জন্য ১৪ দলীয় জোটের নেতারা সমানভাবে অপরাধী।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা ঈদের পরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে আর রাজপথে আসেনি, তারাই এখন আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায়, আওয়ামী লীগকে ভোটের মাঠে চায়। কারণ এরাই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের সঙ্গী ছিল। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-লুটপাটের সুবিধা এরাও ভোগ করেছে। যার কারণে আওয়ামী লীগের গণহত্যা বিরুদ্ধে ওই দলের নেতারা কথা বলছে না, বিচার চাচ্ছে না। বরং বিচার বিলম্বিত করতে যা যা করার তারা সবই করছে।

তিনি আরও বলেন, একটি দল সংবিধানের দোহাই দিয়ে ছাত্র-জনতার প্রতিটি দাবির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে আজকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমির শাহীন আহমেদ খানের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমির মাওলানা শরীফুল ইসলাম, ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, পল্টন থানা সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাবিতে পোষ্য কোটার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল প্রশাসন Sep 26, 2025
img
ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের বিদায় , ফাইনালে পাকিস্তান Sep 26, 2025
img
হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে এই দেশকে রক্ষা করতে চাই : মিয়া গোলাম পরওয়ার Sep 26, 2025
img
গাজীপুরে ঝুটের গুদামে আগুন, ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে Sep 26, 2025
যেভাবে হালাল-হারাম বেছে চলবেন Sep 25, 2025
চীনের রণতরীতে নতুন প্রযুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের চাঞ্চল্য! Sep 25, 2025
শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সেবা নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছে ডাকসু! Sep 25, 2025
এবার ভারত উত্তাল জেন জি আন্দোলনে, প্রাণহানি অন্তত ৪ Sep 25, 2025
এবার ভারত উত্তাল জেন জি আন্দোলনে, প্রাণহানি অন্তত ৪ Sep 25, 2025
বিমানবন্দর থেকে আলাদা বের হওয়ার কারণ জানালেন ড. তাহের Sep 25, 2025
img
অশান্তির আগুন নেভাতে হাতপাখার বাতাস লাগবে : চরমোনাই পীর Sep 25, 2025
img
গাজায় ‘কিছু একটা চুক্তির’ কাছাকাছি আছি: ট্রাম্প Sep 25, 2025
img
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা বিএনপির প্রতিশোধ : আমান উল্লাহ Sep 25, 2025
img
ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলা প্রত্যাহার ফ্রান্সের Sep 25, 2025
img
৮ বিশেষ ট্রেন চলবে দুর্গাপূজায়, বাতিল সাপ্তাহিক ছুটি Sep 25, 2025
img
জাতিসংঘে শতাধিক প্রতিনিধি পাঠিয়ে হতাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার : টিআইবি Sep 25, 2025
img
বাংলাদেশকে ১৩৬ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান Sep 25, 2025
img
স্বাস্থ্যসেবা অর্থ উপার্জনকারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় : প্রধান উপদেষ্টা Sep 25, 2025
img
ড. ইউনূস নোবেল পেলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় আণ্ডা পেয়েছেন : ফয়জুল করিম Sep 25, 2025
img
বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চলছে : প্রধান উপদেষ্টা Sep 25, 2025