নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ড শক্ত করে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে গতানুগতিক নির্বাচনের পরিণতি নিয়ে ইসিকে সতর্ক করেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নানা পরামর্শ দেন। তারা বলেন, কমিশনকে সাহসী হয়ে এবং মেরুদণ্ড সোজা করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে যাতে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া যায়। যেকোনো সময় মব সৃষ্টির বিষয়ে কমিশনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে।
প্রবাসীদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বিষয়টি বিতর্কিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে, নির্বাচনের আগে ও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য ও এআই-জেনারেটেড তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশল হাতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সচেতনতা তৈরি না করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) পদ্ধতি চালু না করার পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে।
এছাড়া, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জাতীয় প্রতীক শাপলা কোনো বিশেষ দলকে না দেওয়ার বিষয়ে ইসিকে অনড় থাকার জন্য অভিনন্দন জানানো হয়। একই সঙ্গে শুধু একক প্রার্থীর আসনেই নয়, সব আসনে ‘না ভোট’ প্রবর্তন করা এবং নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চিন্তার অগ্রদূত হিসেবে আপনাদের সঙ্গে এই সংলাপ আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান এবং উপস্থিত সবার পরামর্শকে ইসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, প্রবাসীদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা এবার মাইলফলক হয়ে থাকবে। নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাওয়ার কথা জানিয়ে সবার সহযোগিতা চান তিনি। সিইসি বলেন, ফোন কলের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের ভয়ে তিনি অনেকের ফোন ধরেন না। তবে ইসির দরজা খোলা এবং যেকোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর এবারের নির্বাচনকে দেশের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করে ইসিকে উঁচু নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সোজা পথে বা সিরাতুল মোস্তাকিম ধরে হাঁটার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস কমিশনকে স্বাধীনভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতের কমিশনগুলো কার্যকরভাবে তা দেখাতে পারেনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বর্তমান পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেন, গতানুগতিক স্টাইলে নির্বাচন করলে কী হবে তা অনুমেয়। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারলে ইসির নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
এসএস/এসএন