ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ২০ দফা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই প্রস্তাবে শুধু যুদ্ধ থামানো নয়, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা শাসন ও প্রশাসনিক কাঠামো নিয়েও বিস্তারিত পরিকল্পনা উঠে এসেছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো— ট্রাম্প নিজেই গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের শর্ত উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যুদ্ধ শেষে একটি টেকক্র্যাটভিত্তিক অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি নতুন সরকার আসা পর্যন্ত গাজার প্রশাসনিক কাজ দেখবে। ট্রাম্প প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগী হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নামও উল্লেখ করেছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ট্রাম্প পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে পাঁচটি মৌলিক প্রশ্ন সামনে এনেছে।
গাজা কীভাবে শাসিত হবে?
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প ও টনি ব্লেয়ার। নতুন সরকার গঠনের আগে গাজার সব কর্মকর্তা এই বোর্ডের অনুমোদনে কাজ করবেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী হবে?
ট্রাম্প চান গাজার নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) হাতে যাক। তবে শর্ত হলো— পিএ-কে অভ্যন্তরীণ সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে এবং গাজার নিরাপদ প্রশাসনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এ সময়সীমা কতদিন, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প।
গাজাকে কি বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে?
জাতিসংঘের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নীতিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে গঠিত হবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজাকে স্বতন্ত্র ভূখণ্ড হিসেবে আলাদা করে দেখানো হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তো স্পষ্ট করে বলেছেন, হামাস বা পিএ— কারো হাতেই গাজার নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
গাজার নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে?
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সেনা নিয়ে একটি অস্থায়ী বাহিনী গঠন করা হবে। তবে কোন দেশ এতে অংশ নেবে বা সেনা পাঠাতে আগ্রহী— সে বিষয়ে প্রস্তাবনায় কোনো স্পষ্টতা নেই।
ইসরায়েল কবে সেনা প্রত্যাহার করবে?
ট্রাম্প বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি ও মাইলফলকের ওপর ভিত্তি করে সেনা প্রত্যাহার হবে। তবে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ নেই। ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— ইসরায়েল কবে উপত্যকা ছাড়বে?
অন্যদিকে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির বিষয়েও ট্রাম্পের প্রস্তাবে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। সময়সীমা না দিয়ে শুধু বলা হয়েছে, গাজার পুনর্গঠন ও পিএ-র সংস্কার প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছালে ফিলিস্তিনের জনগণের রাষ্ট্রগঠনের আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম ও কানাডাসহ অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেই উদ্যোগ বর্জন করেছে। ট্রাম্প একে ‘বোকামিপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তির রূপরেখা থাকলেও মূল বিষয়গুলোতে রয়ে গেছে অস্পষ্টতা— বিশেষ করে গাজার শাসন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে।
সূত্র- আলজাজিরা
এসএন