জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) দ্বিতীয়বার ১২ দিনের অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আলাদা আলাদা গণসংযোগ, গণমিছিল, মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক ও সেমিনারসহ এসব কর্মসূচি আগামী বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হবে।
প্রতিটি দলের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১ থেকে ৯ অক্টোবর তারা ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনে গণসংযোগ করবে; ১০ অক্টোবর ঢাকা ও বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এর আগে গত মাসে একই পাঁচ দফা দাবিতে তারা ৩ দিন কর্মসূচি পালন করেছিল।
মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জামায়াতের সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াত জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’-র বিভিন্ন নজির তুলে ধরে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে এবং সরকারের কাছে দুইটি প্রস্তাব দিয়েছে এক, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করা; দুই, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা। তিনি সতর্ক করেন, এভাবে না হলে ‘ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থ হতে পারে’।
জামায়াত জানায়, তারা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে; তবে সরকারের কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। জামায়াতের বক্তব্য, তাদের আগে ঘোষিত পাঁচ দফা জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ দলটির দ্বিতীয় ধাপের ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ধারাবাহিক কর্মসূচি ও সংলাপ সত্ত্বেও সরকারের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তাদের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে; ‘জনতার রক্তে গঠিত সরকার জনগণের দাবি উপেক্ষা করলে তার নৈতিক ও আইনগত বৈধতা ক্ষুণ্ন হবে’ এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ইউনুছ আহমাদ আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের ইস্যুতে তারা সরকারকে সহায়তা করেছে, কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের স্থায়ী বিলোপে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
খেলাফত মজলিস এক বিবৃতিতে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছে, ‘দেশ আজ ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত’ এবং ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করায় জাতি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে’। খেলাফত মজলিস এ কর্মসূচিতে অংশ নিলেও ৫ দফার পিআর (প্রতিনিধিত্ব) ইস্যুতে তাদের ভিতরে কিছু মতভিন্নতা রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ ওই বিবৃতিতে বক্তব্য রেখেছেন।
জাগপার মঙ্গলবার পল্টনে সংবাদ সম্মেলনে (দুপুর ১২টায়) সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধানের মাধ্যমে জানায়, তারা ৭ দফা দাবির সঙ্গে মিল রেখে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এছাড়া ৪ অক্টোবর খেলাফত মজলিস দ্বিতীয় ধাপে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে এবং আরও দুটি দলের অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা বাকি আছে বলে জানা গেছে।
পাঁচ দফা দাবি হলো (১) জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে; (২) নির্বাচন হবে পিআর পদ্ধতিতে; (৩) সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; (৪) গণহত্যার বিচার দৃশ্যমানভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে; (৫) বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোষী জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার পরিচালনা করতে হবে এবং বিচার চলছে এমন সময় তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে।
এমকে/এসএন