জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সনদের বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনায় জানা যায়, সনদ বাস্তবায়নের গণভোটের ব্যবস্থা নিয়ে রাজি হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গণভোট কবে হবে, সেটি এখনো মতানৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো।
আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আলী রীয়াজ বলেন, আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় পর্বের আলোচনার ছিল পঞ্চম দিন। এর আগে আমরা চারবার বৈঠক করেছি। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ– গণভোটের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সে বিষয়ে আমরা একমত।
এই গণভোট কী কাঠামোর মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে আলোচনা করে এক জায়গায় আসা যায় কিনা সে চেষ্টা করবো।
তৃতীয় পর্যায়ের এই আলোচনা বাস্তবায়নে যখন আলোচনার প্রশ্নে আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি, তারা সর্বসম্মতভাবে আমাদের যে মতামত দিয়েছেন– জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে সেগুলো হচ্ছে, একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।
তিনি বলেন, ওই অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে। গণভোটে দুটো আলাদা প্রশ্ন থাকতে হবে। যাতে ঐকমত্য বা বৃহত্তর ঐক্য আছে যেসব সেসব বিষয়ে একটি, আর ভিন্ন মত বা নোট অফ ডিসেন্ট আছে সেসব বিষয়ে, চতুর্থত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত এবং পঞ্চম পরিষদ আদেশে অর্থাৎ এই আদেশে, যে আদেশের কথা তারা বলছেন সেখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদন সাপেক্ষে জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কারগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, সারাদিনের আলোচনায় দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন রকম মত এসেছে। যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে একই দিনে পৃথক ব্যালটে গণভোট দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করার পক্ষে মত এসেছে।
আলী রীয়াজ বলেন, এ বিষয়ে কমিশন মনে করছে– মূলত এখানে এক ধরনের ঐকমত্য আছে, সংসদকে জাতীয় জুলাই সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষমতা দিতে হবে। যে দল এবং জোটগুলোর পক্ষ থেকে এই মত দেওয়া হয়েছে। সে দলগুলোর এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত বিবেচনা করে যেন ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সরকারকে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ দেয়।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন এই প্রেক্ষাপটে গত পাঁচ দিন ধরে বিশেষজ্ঞদের যে মতামতগুলো সমন্বিত করেছে, আগামী দুই একদিনের মধ্যে সেগুলো আলোচনা করে সরকারকে পরামর্শ দেব এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোকে এ বিষয়ে আমরা জানাবো। সারাদিনের কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে আমরা এই জায়গায় উপনীত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই সেদিনও আমি বলেছি তিন চতুর্থাংশের বেশি দলের পক্ষ থেকে নাম পাঠানো হচ্ছে। কিছু কিছু দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কারণে সম্ভবত সাংগঠনিক ব্যস্ততার কারণে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বেশ কয়েকটি দল আমাদের জানিয়েছেন আগামী এক বা দুই দিনের মধ্যেই তারা তাদের নাম পাঠাতে পারবেন। এই নামগুলো পাওয়া গেলে আমরা চাই কমিশনের পক্ষ থেকে যেন আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে সম্ভব হলে, না হলে সর্বোচ্চ ১৬/১৭ তারিখের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাক্ষর হয়। এই সাক্ষর ছাড়াও আমাদের দিক থেকে আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করব।
এমআর