প্রথমবারের মতো সারা দেশে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া শুরু করেছে। গতকাল রোববার (১২ অক্টোবর) এই কর্মসূচির প্রথম দিনেই ১০ লাখ শিশু টাইফয়েডের টিকা পেয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী ১৮ কর্মদিবসে প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭ লাখ ৭৮ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ইপিআই) ডা. মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নিবন্ধন পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাত লাখের বেশি শিশু টিকা পেয়েছে। এর বাইরে নিবন্ধন ছাড়া যারা টিকা নিয়েছে, তাদের তথ্য রাতের মধ্যে সিস্টেমে হালনাগাদ করা হবে। আমাদের ধারণা, প্রথম দিনেই ১০ লাখের বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে টিকার প্রদানে গতি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
এর আগে সকালে রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্রে মাসব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নূরজাহান বেগম বলেন, টাইফয়েডে এখনও আমাদের দেশের শিশুরা মারা যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশ ডায়রিয়া ও রাতকানা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে, এবার টাইফয়েড প্রতিরোধেও সফল হবে। সচেতনতা ও টিকাদানের মাধ্যমে এই রোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
তিনি বলেন, যদি প্রতিটি শিশুর কাছে এই টিকা পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে টাইফয়েডে মৃত্যুর হার প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই উদ্যোগ আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে এক ডোজ করে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কার্যক্রম চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়া হবে। পথশিশুদের টিকাদানে সহায়তা করবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো।
ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সপ্তাহে পাঁচ দিন করে মোট ১৮ কর্মদিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকা দেওয়া হবে। এর বাইরে শনিবার ও অন্যান্য দিনে নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্রে এ কার্যক্রম চলবে।
ডিএনসিসি বলছে, ঢাকা উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৭২ হাজার শিশু টাইফয়েডের টিকা পাচ্ছে। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের ১০ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯ শিশুকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ১৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাত লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ৬৫৬টি ইপিআই কেন্দ্রে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৯ শিশু এই টিকা পাবে। কার্যক্রম চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, জন্মসনদ না থাকা শিশুরাও এই টিকার আওতায় আসবে, যাতে কেউ বাদ না পড়ে।
এটি দেশের প্রথম জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট তৈরি করেছে টিকাটি, যা সরকার পেয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহায়তা সংস্থা গ্যাভির সহায়তায়।
এমআর/টিকে