জুলাই সনদে ইতিহাস বিকৃতি ও পুনর্লিখনের অভিযোগ তুলে এর নিন্দা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটি বলছে, জুলাই সনদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ’২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত, যা জুলাইয়ের শহীদদের রক্তের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামীকাল ১৭ অক্টোবর ২০২৫, স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দলিল ‘জুলাই সনদ’, যাতে অন্তর্ভুক্ত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে একমত হয়েছে সব রাজনৈতিক দল।
তবে গভীর উদ্বেগের বিষয়, রাষ্ট্রীয় সংস্কারের এই দলিলের প্রকাশিত খসড়ায় ইতিহাস বিকৃতি ও পুনর্লিখনের ঘটনা দেখা গেছে। বিশেষ করে, এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ’২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত, যা জুলাইয়ের শহীদদের রক্তের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।
এতে বলা হয়, ২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার যে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট ও খুনি হাসিনার পলায়ন ঘটেছিল, তা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ফসল। যার সূচনা হয় ১ জুলাই ২০২৪-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠনের মধ্য দিয়ে, যা ক্রমে ৯ দফা থেকে এক দফায় রূপান্তরিত হয়।
সেই এক দফা ছিল ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’। এই যে ৯ দফা এবং পরবর্তীতে এক দফা, যার মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার অতি অভিপ্রায় স্পষ্ট হয়েছিল; সেই অভিপ্রায়ের ফলেই বাংলাদেশের আমূল সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের বুনিয়াদ স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু এই জুলাই সনদে সেই বুনিয়াদকে ধ্বংস করার পাশাপাশি ছাত্র-জনতার অভিপ্রায়ের বিকৃতি ঘটেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এ ছাড়া সংস্কার প্রক্রিয়ার নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জুলাইয়ের শহীদ পরিবার, আহত ব্যক্তি ও ছাত্রদের উপেক্ষা করা হয়েছে।
কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে রাষ্ট্রের ইতিহাসকে বিলীন করা হয়েছে, যার নজির পূর্বেও রয়েছে। অতীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বারবার প্রতারণা করতে দেখেছি। এখনো সেই একই প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ধরনের ইতিহাস বিকৃতির পুনরাবৃত্তিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি বলছে, আমরা লক্ষ করেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর সমাধান না করেই দ্রুত স্বাক্ষর সম্পন্ন করার টালবাহানা চলছে।
আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে এমন টালবাহানা দেখা গেছে, অথচ সেই ঘোষণাপত্র এখনো আইনি বৈধতা পায়নি। অর্থাৎ ছাত্র-জনতা এখন আর কথার এসব ফুলঝুড়িতে বিশ্বাস করে না। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জুলাই সনদের স্বাক্ষর কার্যক্রম সম্পন্নের আগে এর আইনি ভিত্তি ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর সমাধান নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল, জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহত এবং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রদের মাধ্যমে জুলাই সনদের পরিপূর্ণতা ও বৈধতা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানাচ্ছে।
টিজে/এসএন