ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে কিনা তা বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
এই বৈঠকের একদিন আগে ট্রাম্প জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার টেলিফোন আলাপে ‘দারুণ অগ্রগতি’ হয়েছে। ফোনালাপের পর দুই নেতা হাঙ্গেরিতে সরাসরি বৈঠক করতে সম্মত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিনের সঙ্গে আমার আলোচনা খুব ফলপ্রসূ ছিল। আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন ও মস্কোর প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করবে।’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মস্কো টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের খবর শুনে আলোচনায় ফিরতে তড়িঘড়ি করছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ওই উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ট্রাম্প বলেন, ‘দেখা যাক... হয়তো দেব।’
রাশিয়ার সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প জানান, ‘আমরা আমাদের টমাহক মজুদ শেষ করতে পারি না। আমাদেরও এসব দরকার। তাই নিশ্চিত নই আমরা কী করতে পারব।
’
নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর, পুতিনের সঙ্গে আমরা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বাণিজ্য পুনরায় শুরু নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে আলোচনা করেছি।’
তিনি আরও জানান, আগামী সপ্তাহে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টাদের বৈঠক হবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
ট্রাম্প বলেন, তিনি শুক্রবার জেলেনস্কিকে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত জানাবেন। তার ভাষায়, ‘আজকের ফোনালাপে বড় অগ্রগতি হয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, তিনি আশা করছেন দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরিতে পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হবে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানও শুক্রবার রাষ্ট্রীয় রেডিওতে বলেন, ‘পুতিনের সঙ্গে আমি আজ কথা বলব। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেহেতু যুদ্ধের পক্ষে, তাই এই শান্তি প্রক্রিয়া থেকে তাদের বাদ দেওয়া যৌক্তিক।’
এদিকে, পুতিন-ট্রাম্প ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর বছরের অন্যতম বৃহৎ হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের দূত ওলগা স্টেফানিশিনা বলেন, ‘রাশিয়া ২৮টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ৩২০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।’
তিনি বলেন, “এই হামলা দেখায়, মস্কোর কথিত ‘শান্তি ইচ্ছা’ আসলে কেমন। এর একমাত্র জবাব হলো চাপ বৃদ্ধি, কঠোর নিষেধাজ্ঞা, শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা এবং দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ।”
গত আগস্টে আলাস্কায় মুখোমুখি বৈঠকের পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি কড়া অবস্থান নিয়েছেন। ওই বৈঠকে শান্তি আলোচনা শুরু করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন দুই নেতা।
নির্বাচনের সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরলেই কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন। তবে সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেছেন, ‘এটি আমার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে জটিল সংকটগুলোর একটি।’
আগে রাশিয়ার প্রতি কিছুটা নরম অবস্থান নিলেও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের মনোভাব বদলেছে। সেপ্টেম্বরে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন পুরো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবে।’
এমনকি জুলাইয়ে তিনি পুতিনকে দুই সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, নইলে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দেন, যদিও পরবর্তীতে তা কার্যকর হয়নি।
আরপি/এসএন