জাল টাকাকাণ্ডে তোলপাড় চলছে শেরপুরে। ডাকঘর সঞ্চয় অফিস থেকে চার দিনের ব্যবধানে দুই গ্রাহকের তোলা টাকা ব্যাংকে জমা দিতে গিয়ে তা জাল বলে শনাক্ত হয়। হাট-বাজারে জাল টাকা নিয়ে প্রায়ই প্রতারিত ও বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এমনকি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকেও জাল টাকা পাওযার ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, জাল টাকার বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তদন্তে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে জাল টাকাকাণ্ডে শেরপুরে জেলার প্রধান ডাকঘরের দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জেলার প্রধান ডাকঘরে জাল টাকা ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ।
গ্রেপ্তার শেরপুর প্রধান ডাকঘরের দুই কর্মচারী হলেন ক্যাশিয়ার মানিক মিয়া ও ট্রেজারার হাফিজুর রহমান।
গত ১৬ অক্টোবর মানিক মিয়াকে এবং ১৮ অক্টোবর হাফিজুর হমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল রবিবার হাফিজুর রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গ্রেপ্তার মানিক মিয়াকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আগামী ২৩ অক্টোবর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরো কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর শেরপুর সদর উপজেলার গনইমমিনাকান্দা গ্রামের শাহিনা বেগম (৬২) উত্তরা ব্যাংকে দুই লাখ ৬৯ হাজার টাকা জমা দিতে যান। ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ওই টাকার মধ্যে ৫৩টি এক হাজার টাকার নোট জাল বলে শনাক্ত হয়।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর শেরপুর সোনালী ব্যাংকে নুহু নামের এক ব্যক্তি সরকারি চালানের দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা জমা দিতে যান। সেখানে ওই টাকার মধ্যে ২৫টি এক হাজার টাকার নোট জাল বলে শনাক্ত হয়। দুইজনই ওই টাকা তোলেন শেরপুর প্রধান ডাকঘর থেকে। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রশাসন, ডাকঘরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ নড়েচড়ে বসে। সরকারের অন্তত তিনটি বিভাগ জাল টাকার বিষয়ে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি শেরপুর শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় সম্রাট নামের এক যুবক ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ডেবিট কার্ড দিয়ে ১০ হাজার টাকা তোলেন। সেখানে তিনি একটি এক হাজার টাকার নোট জাল পান।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ওসি জোবাইদুল আলম বলেন, জাল টাকার বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে, শরপুর প্রধান ডাকঘরে সঞ্চয় শাখায় টাকা দেওয়া-নেওয়ার সময় কিছু জাল টাকা পাওয়ার অভিযোগ ওঠায় ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে আজ সোমবার জরুরি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল জামালপুর বিভাগ আব্দুল হামিদ স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শেরপুর প্রধান ডাকঘরে জালটাকার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়টি বর্তমানে তদন্তধীন। ইতোমধ্যে দেশে বিপুল পরিমাণে জাল নোট অনুপ্রবেশের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেস বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা অনুযায়ী নগদ টাকা লেনদেনে জনসাধারণকে সতর্কতা অবলম্বন এবং পোস্ট অফিসের সেবা দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এতে নোট নেওয়ার সময় নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসমূহ যথা জলছাপ, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা, রং পরিবর্তনশীল কালি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও ক্ষুদ্র লেখা ইত্যাদি যথাযথভাবে যাচাই, বড় অংকের লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পাদন, নগদ লেনদেনে জাল নোট পেলে বা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানা থাকলে অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।
জামালপুর বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল আব্দুল হামিদ বলেন, অধিকতর সতর্কতার জন্যই আমি এই নির্দেশনা জারি করেছি। যেন পরবর্তীতে পোস্ট অফিস থেকে কোনো গ্রাহক প্রতারিত না হন।
জাল টাকার বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এসেছে। এটি নিয়ে আমাদের কাজ চলছে।
এমকে/এসএন