ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফোর্টিফাই রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রবার্ট এফ. ক্যানেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ড. ইউনূসকে একটি যৌথ চিঠি পাঠায়। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল চিঠির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যদি দেশে গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হয় তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যায় না, এতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। চিঠিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান হয়রানিমূলক মামলা-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ৬টি সংস্থার পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। নথিতে মোট ১২টি সুপারিশও করা হয়েছে; চিঠি ও সুপারিশগুলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। মাসুদ কামাল বলেন, চিঠিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি সুপারিশ ছিল যে আওয়ামী লীগের ওপর আনা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও বহুদলীয় রাজনীতির পথের বাধা সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে তারা জাতিসংঘের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির ২০২৫ সালের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গণতান্ত্রিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
তিনি চিঠির একটি পয়েন্ট উল্লেখ করে বলেন, একক মামলায় বড় সংখ্যক লোককে আসামি করা। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, কিছু হত্যা বা হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় এক সময় ৪০–২০০ জন পর্যন্ত শিল্পী, সাংবাদিক বা সাধারণ মানুষকে একইসঙ্গে নাম জড়ানো হয়েছে।
এমন বড় সংখ্যক আসামির ওপর ভিত্তি করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কিভাবে যুক্তিযুক্ত হবে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এর ফলে লক্ষাধিক মানুষ নিয়মিত হাজিরাসহ হয়রানির মধ্যে পড়ছে, জামিন না পাওয়ারও শিকার হচ্ছে অনেকে।
তিনি আরো বলেন, চিঠির আরেকটি পয়েন্ট হলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের দাবি। তিনি বলেন, ওই যৌথ চিঠিতে সুপারিশ করা হয়েছে আগস্ট ২০২৪’র পরে ও তার আগে দায়ের হওয়া সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো পর্যালোচনা করে, বিশেষ করে দৃঢ় বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাবে থাকা মামলাগুলো বাতিল করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে বহু মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিবেচনার বাইরে থেকে মানুষকে কষ্ট দিয়েছে এবং এসব মামলার পুনঃনিরীক্ষা জরুরি।
তিনি বলেন, সংবিধান ও আইনের মধ্যে থেকেই সমস্যাগুলো সমাধান করে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
টিজে/টিকে