রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ইউক্রেনকে সহায়তায় ব্যবহারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই পদক্ষেপে ইউক্রেনের জন্য ১৪০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৬৩.২৭ বিলিয়ন ডলার) ঋণ সহায়তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের বৈঠক থেকে আসা এ সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মস্কো।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে স্বাগত জানিয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা ইউক্রেনকে ইইউ-এর “ভবিষ্যত সদস্য” হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ২০২৬ এবং ২০২৭ সালে কিয়েভের তহবিলের চাহিদা মেটাতে জব্দ করা রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিকিউরিটিজ থেকে নগদ ব্যালেন্স ব্যবহার করার পরিকল্পনার বিষয়ে একটি “রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত” নেয়া হবে।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসন জানান, এই প্রস্তাবে ব্যাপক সমর্থনও রয়েছে। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেটেরি অর্পোও আশাবাদ প্রকাশ করেন যে ইউরোপীয় কমিশন দ্রুত প্রস্তাবটির বাস্তব রূপরেখা উপস্থাপন করবে, যাতে আগামী বছরই সম্পদগুলো ব্যবহারের সুযোগ হয়।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, বেলজিয়ামের ডিপোজিটরিতে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অংশ, প্রায় ২২৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ অবস্থায় রয়েছে। আর তাই এই প্রস্তাবের বৈধতা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দেশটি। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভার বলেন, ‘আমাদের শর্ত পূরণ না হলে আমরা এই সিদ্ধান্ত বন্ধ করে দেব।’
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জ বলেন, ‘আমি বেলজিয়ামের উদ্বেগ বুঝতে পারছি, তবে আমরা এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।’ বেলজিয়ামের জন্য আইনি নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে ইইউ একটি নতুন কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছে বলে জানান ইইউ পররাষ্ট্রনীতির উচ্চ প্রতিনিধি কাজা কালাস। রাশিয়ার সম্পদের ঝুঁকি ভাগাভাগির বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ব্রাসেলস থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হাসেম আহেলবারা জানান, ইইউ নেতারা একটি চূড়ান্ত ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। তবে বিতর্ক চলছে, ইউক্রেন এই অর্থ ইউরোপীয় নাকি যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ক্রয়ে ব্যবহার করবে। তিনি বলেন, ‘জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি বলেছে যদি এই অর্থ ছাড় দেয়া হয়, তা ইউরোপীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে কেনার জন্যই ব্যবহার করতে হবে, যাতে ইউরোপও এর সুফল পায়।’
এদিকে বছরের শেষ নাগাদ এই অর্থ ইউক্রেনের দরকার বলে জানিয়েছেন দেশটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এছাড়া এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউক্রেনের স্বাধীনতা থাকা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউকে নতুন জ্বালানি নিষেধাজ্ঞার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এর আগে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন। এতে রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানিগুলোকে টার্গেট করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার ইইউও রাশিয়ার ওপর ১৯তম দফা নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করে। এ বিষয়ে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞায় তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ইইউর জন্য রাশিয়ান জ্বালানি নির্ভরতা কমানোর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
রাশিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার অর্থ ভাগাভাগির বিষয়ে ইইউ’র নিতে যাওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হলে এর প্রতিক্রিয়া হবে বেদনাদায়ক। এটি সরাসরি চুরির শামিল।’
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রুশ জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞাকে “অকার্যকর ও আত্মঘাতী” বলে অভিহিত করেন জাখারোভা। বলেন, ‘ইইউ অভিজাতদের মেনে নিতে হবে যে তাদের পদক্ষেপগুলো কাজ করছে না। ইউক্রেনে রাশিয়ার লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে, এবং সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করা প্রয়োজন।’
সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘পাগল ট্রাম্প ইউরোপের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এটি যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া আর কিছু নয়।’
ইএ/টিকে